**9 ত৫, পি

5 শিগা

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রায় বাহাদুর সি, আই, ই,

প্রণীত

শীললিতচন্দ্র সিত্র, এম কর্তৃক প্রক্]শিত |

৩০1৩ মদন মিত্রের লেন? দীনধাম, কলিকাতা

১৩১৩

[ মূল্য ।* চারি আঁন1।

লিরীনি০৮ ৯৯০৫৩

কলিকাতা,

৯৭ নং নন্দকুমার চৌধুরীর দ্বিতীয় লেন, “কালিকা-যন্ধে”

শ্রীশরচ্চন্্র চক্রবর্তী কর্তক মুদ্রিত

নিবেদন

৯২৮৩ সনে পিতৃদেবের গ্রন্থাবলীর প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই সংস্করণের জন্য, বঙ্কিমচন্দ্র, পিতৃদেবের একটি ক্ষুদ্র জীবন-চরিত লিখিয়া দেন। পরে, এই রচনার স্বন্ত আমাদিগকে দান করিয়া, উহা শ্বতন্্ পুষ্তকাকাঁরে প্রকাশ করিতে অনুমতি করেন। তদবধি জীবন-চরিত আমাদের কতৃক প্রকাশিত হইতেছে

১২৯৩ সনে, পিতৃদেবের বাঁল্য-রচনা-সংযুক্ত গ্রন্তাবলীর আর একটি সংস্করণ প্রকাশিত হয় এই সংস্করণের জন্য, বঙ্ষিম্চন্্র, “দীনবন্ধু মিত্রের কবিত্ব” শীর্ষক একটি সমালোচনা লিখিয়া দেন। জীবনীর ইদানীস্তন সংস্করণে ইহাও সন্গিবিষ্ট আছে

এই ভ্ুই মহাপুরুষের বন্ধন সাহিত্যের অঙ্গীভূত বলিয়া বর্ণন। কর যাইতে পারে কিন্তু, বহ্কিমচন্দের প্রণয়ের পরিচয় কেবল মাত্র সাহিত্যে পাওয়। যায়, এমন নহে কাধ্যতঃ, তিনি শাহার রচনার উপস্বহ ভোগ করিতে দিয়) স্বীয় পরলৌকগত বন্ধর সম্তানগণের প্রতি আন্তরিক স্সেহ দয়ার মধুর নিদর্শন দেখাইয়াছেন। ভ্াহার ঞণ আমাদিগের পরিশোধ করা অসাধ্য কিন্তু আমরা তাহ। স্বীকার করিতে বাধ্য।

ইহাদের বন্ধ সম্বন্ধে, আর একটি কথ! বলিবার আছে। পিতৃদেব স্বীয় নবীন তপস্থিনী বন্ষিমচন্দ্রকে উতৎসগ করেন। বঙ্ষিমচন্দ্র তাহাকে মুণালিনী উত্সর্গ করেন কিন্তু পিতৃদেবের মৃত্যুর সময বক্ষিমচন্দ্র বঙ্গদর্শনে কিছুই লেখেন নাই ইহাতে অনেকে বিশ্গিত হইঘ্নাছিলেন। সেই নিমিত্ত বঙ্ষিমচন্দ্র “বঙ্গরর্শনের বিদায় গ্রহণ”ঞ ইহার এইরূপ কৈফিয়ত দিয়া- ছিলেন--“আমার আর একজন সহায় ছিলেন, সাহিত্যে আমার সহায়, সংসারে আমার সুখ দুঃখের ভাগা, তাহার নাম উল্লেখ করিব যনে করিয়াও উল্লেখ করিতে পারিতেছি না এই বঙ্গদরর্শনের বয়ংক্রম অধিক হইতে ন। হইতেই, দীনবন্ধু আমাকে পরিত্যাগ করিয়া গিয়াছিলেন। তাহার জন্ত তখন বঙ্গসমাজ রোদন করিতেছিল, কিন্তু এই বঙ্গদর্শনে আমি তাহার নামো- ল্লেখ করি নাই কেন, তাহা কেহ বুঝে না। আমার যে হুঃখ, কে তাহার ভাগী হইবে কাহার কাছে দীনবনগুর জন্য কাদিলে প্রাণ জুড়াইবে। অন্ঠের

কাছে দীনবন্ধু স্থুলেখক, আমার কাছে প্রাণতুল্য বন্ধু; আমার সঙ্গে,সে শোকে পাঠকের সহ্ৃদয়তা হইতে পারে না বলিয়া, তখন কিছু বলি নাই, এখনও কিছু বলিলাম না--” কিন্তু তিনি এইখানে নিবৃত্ত হইতে পারেন নাই তিনি পরে দেখাইয়াছেন যে তাহাদের বন্ধুত্ব ইহলোক পরলোক ব্যাপী ; স্বর্গে মর্ত্যে সম্বন্ধ আছে। ইহা হইতেই আনন্দমমঠের অভিনব উতৎসর্গের সৃষ্টি এবং যদ্দি বীজের সহিত বৃক্ষের তুলনা সম্ভব হয়, তাহা হইলে বলা যাইতে পারে, আনন্দমঠের উৎসর্গ বাঙ্গাল সাহিত্যের “17 121001910).৮

বন্ষিমচন্দ্রের শ্বর্গীরোহণ উপলক্ষে, আমার অগ্রজ শ্রীযুক্ত বাবু বঙ্কিমচন্দ্র মিত্র মহাশয় “অঞ্জলি দান” নামক যে কবিতা রচন। করিয়াছিলেন, তাহাতে এই বিষয় উপলক্ষ করিয়৷ যে কয়েকটি ছত্র লিখিত হয়, তাহ! “বঙ্ষিম-দীনবন্ধু” নামে অভিহিত হইয়। পরিশিষ্টে সন্নিবিষ্ট হইল পিতৃদেবের ১৩১৩ সালের সৃত্যু-তিথি উপলক্ষে, অগ্রজ মহাশয় “দেবন্বপ্ন” নামক আর একটি কবিতা রচনা করিয়াছিলেন, তাহাও পরিশিষ্টে সন্নিবিষ্ট হইয়াছে।

বঙ্গ-সাহিত্যের লন্ধপ্রতিষ্ঠ লেখক, শ্রীযুক্ত বাবু বিজয়চন্দ্র মজুমদার মহাশয়, সম্প্রতি বক্ষিমচন্দ্রের সমালোচনা অবলম্বন করিয়।,পতৃদেবের কাব্যের যে অনুশীলন করিয়াছেন, তাহ! বিজয় বাবুর অনুমতি অনুসারে পর্রিশিষ্টে পুনমুদ্রিত হইয়াছে বিজর বাবু এই অন্থমতি দানে আমাদিগকে কৃতজ্ঞতা পাশে বদ্ধ করিয়াছেন

আধাঢ়ী পুর্ণিমা ১৩১৬ | ] শ্রীললিতচন্দ্র মিত্র দীনধাম, কলকাতা

দীনবন্ধু-জীবনী |

১। জীবনী

দীনবন্ধুর জীবনচর্িিত লিখিবার এখনও সময় হয় নাই। কোন ব্যক্তির জীবনের ঘটনাপরম্পনার বিবৃতিমাত জীবনচব্রিতের উদ্দেশ্য নহে কিয়ৎ- পরিমাণে তাহা উদ্দেশ্য বটে, কিন্ত বিনি সম্প্রতি মাত্র অন্তহিত হইয়ছেন, ভাহাঁর সন্ঘীম় প্ররূভ ঘটন। সকল বিবুত করিতে হইলে, এমন অনেক কথা বলিতে হন যে, তাহ।ত জীবিত লোক শিপ্ত কখন কোন জীবিত ব্যক্তির নিন্দা করিবার প্রমোজন ঘটে : কখন জীবত বাক্তিদিগের অন্য প্রকার পীড়াদারক কথা বশিবার প্রশ্নোঞগন হন; কখন কখন গুহ্ত কগ। ব্যক্ত কন্িত্যে হয়, তাহ! কাভারও না! কাহারও পীডাদারব হন মার, একজনেত্ জীবন- বৃত্তান্ত অবগত হউরা অন্য ব্যক্তি শিক্ষা প্রাপ্ত ভউক,--ইহ। যদি জীবনচরিত- প্রণস্বনের যণার্থ উদ্দেশা হম, তবে বর্ণনীগ বাকি দোন গুণ উভরেরই সবিস্তর বর্ণনা করিতে হর। দোবশগ্ মন্ুনা পু্বীতে জন্মগ্রহণ করে নাই দীনবন্ধুর ঘে কোন দোঁষ ছিল নাঃ ইহ। কোন্‌ সাহসে বলিব ? যে কারণেই হউক, এক্ষণে ঠাহার জীবনচরিত লিখিহবা নহে।

আর লিখিবার াঁদশ প্ররোৌজনও নাই এই বঙ্গদেশে দীনবন্ধুকে না চিনিত কে? কাহার সঙ্গে তাহার আলাপ" [সীহান্দ ছিল না? দীনবন্ধু যে প্রকৃতির লোক ছিলেন, তাহা কে নাজানে? সুতরাং জানাইবার তত আবশাক নাই

এই সকল কারণে” আমি এক্ষণে দানবন্ধর প্রক্ত জীবনচরিত লিখিব ন|। যাভ। লিখিবঃ ভাহ। পক্ষপাতশন্য হইয়া লিখিহে খই করিব দীনবন্ুর শ্লেহ- পণে আমি খনী, কিন্তু ভাই বলিয়! আমি মিথ্যা প্রশংসার দ্বারা সে খণ পন্দি- শোপ কব্রিবার যই্ই করিব ন|।

পুর্ব বাঙ্গালা রেলগ্য়ের কীঁচরাপাড়। স্টেশনের কর ক্রোশ পুর্বোত্তরে

দীনবন্ধু-জীবনী |

চৌবেড়িন্। নামে গ্রাম আছে ; যমুনা নামে ক্ষুদ্র নদী এই গ্রামকে প্রায় চারি দিকে বেষ্টন করিয়াছে ; এইজন্য ইহার নাম চৌবেড়িয়া। সেই গ্রাম দীনবন্ধুর জন্মভূমি। গ্রাম নদীয়। জেলার অন্তর্গত। বাঙ্গালা সাহিত্য, দর্শন ধণ্ম-শান্্র সন্বন্ধে নদীয়া জেলার বিশেষ গৌরব আছে ; দ্ীনবন্ধুর নাম নদীয়ার আর একটী গৌরবের স্থল।

সন ১২৩৬ সালে দীনবন্ধু জন্মগ্রহণ করেন তিনি কালাচাদ মিত্রের পুল্র। তাহার বাল্যক।ল-সন্বন্ধীয় কথা অধিক বলিবার নাই। দীনবন্ধু অল্পবয়সে কলিকাতায় আসিয়া, হেয়ার স্কুলে ইংরেজি শিক্ষা আরন্ত করেন সেই বিদ্ধা- লয়ে থাকিতে থাকিতেই তিনি বাঙ্গাল রচনা আরম্ভ করেন।

সেই সময় তিনি প্রভাকর-সম্পাদক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের নিকট পরিচিত হয়েন। বাঙ্গালা সাহিত্যের তখন বড় হুরবস্থা। তখন প্রতাকর সব্যোৎকষ্ট সংবাদপত্র ঈশ্বরগুপ্ত বাঙ্গালা সাহিত্যের উপর একাধিপত্য করিতেন। বালকগণ তাহার কবিতায় মুগ্ধ হইয়া তাহার সঙ্গে আলাপ করিবার জন্য ব্যগ্র হইত। ঈশ্বরগুপ্ত তরুণবয়স্ক লেখকদিগকে উৎসাহ দিতে বিশেষ সমুৎস্ুক ছিলেন। হিন্দু-পেটী ঘট যথার্থ বলিয়াছিলেন, আধুনিক লেখকদিগের মধ্যে অনেকে ঈশ্বর গুপ্তের শিষ্য। কিন্তু ঈশ্বরগুপ্রের প্রদত্ত শিক্ষার ফল কতদূর স্থায়ী বা বাঞ্চনীয় হইয়াছে তাহা বল! যায় ন!! দীনবন্ধু প্রভৃতি উৎকুষ্ট লেখকের স্যার এই ক্ষুদ্ধ লেখক ঈশ্বরগপ্তেন নিকট খণী। সুতরাং ঈশ্বর- গুপ্তের কোন অপ্রশংপার কথা লিখিবনা আপনাকে অকরুতজ্ঞ বলিয়া পরিচয় দিতে ইচ্ছুক নহি কিন্তু ইহাও অস্বীকার করিতে পারি ন। যে, এখনকার পরিমাণ ধরিতে গেলে, ঈশ্বরগুপ্তের রুচি তাুশ বিশুদ্ধ বা উন্নত ছিল না, বলিতে.হইবে। ্টাহার শিষ্যের। অনেকেই তাহার প্রদত্ত শিক্ষ। বিস্মত হইয়া অন্ত পথে গমন করিয়াছেন বাবু রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভৃতির রচনামধ্যে ঈশ্বর গুপ্তের কোন চিহ্ন পাঁওর। যার না। কেবল দীনবন্ধতেই কিয়ৎপরিমাণে তাহার শিক্ষার চিহু পাওয়া যায়।

“এলোচুলে বেনে বউ আল্ত! দিয়ে পায় নলক নাকে, কলপী কাকে, জল আন্তে যায়,

ইত্যাকাঁর কবিতায় ঈখরগুপ্তকে ন্মরণ হয়। বাঙ্গাল! সাহিত্যে চারিজন রহস্তপটু লেখকের নাম ক্রা যাইতে পারে,-টেকটাদঃ হুতোম, ঈশ্বরগুপ্ত এবং

দীনবন্ধু-জীবনী।

দীনবন্ধু। সজেই বুঝ| যার যে, ইহার মধ্যে দ্বিতীয় প্রথমের শিষ্য, এবং চতুর্থ তৃতীয়ের শিষ্য টেকচাদের সহিত হুতোমের যতদুর সাদৃপ্ঠ, ঈশ্বর গুপ্তের সঙ্গে দ্রীনবন্ধুর ততদূর সাদৃশ্য না থাকুক, অনেকদূর ছিল। প্রভেদ এই যে, ঈশ্বরগুপ্তের লেখার বাঙ্গ (৮1) প্রধান; দীনবদ্ধর লেখায় হান্ত প্রধান। কিন্তু ব্যঙ্গ এবং হস্ত উভয়বিধ রচনায় জনেই পটু ছিলেন._তুল্য পটু ছিলেন না। হান্তরসে ঈশ্বরগুপ্ত দীনবন্ধুর সমকক্ষ নহেন। আমি যতদূর জানি, দীনবন্ধুর প্রথম রচন! “মানব-চবিত্র” নামক একটী কবিত।। ঈশ্বরপ্তপ্ত কটক সম্পাদিত “সাধুরঞ্জন” নামক সাপ্তাহিক পত্রে উহ। প্রকাশিত হয অতি অল্প বয়সের লেখা, এজন্য কবিতায় অন্ুপ্রাসের অত্যন্ত আঁড়ম্বর | ইহাঁও, বোধ হয়, ঈশ্বর গুপ্তের প্রদত্ত শিক্ষার ফল অন্টে কবিত। পাঠ করির়। কিন্নপ বোধ করিয়াছিলেন বলিতে পারি না, কিন্ত উহ! আমাকে অত্যন্ত মোহিত করিয়াছিল। আমি কবিত। আগ্োপাস্ত কস্থ করিয়াছিলাম, এবং ঘত দিন সেই সংখ্যার সাধুরঞ্জন খানি জীর্ণগলিত ন৷ হইয়াছিল, তত দ্দিন উহাকে ত্যাগ করি নাই। সে প্রায় সাতাইশ বত্সর হইল; এই কাল মধ্যে কবিতা আর কখন দেখি নাই; কিন্তু কবিতা আমাকে এমনই মন্ত্রমু্ধ করিয়াছিল যে" অগ্ঠাপি তাহার কোন কোন অংশ শ্মরণ করিয়া বলিতে পারি পাঠকগণের কবিতা দেখিতে পাইবার সম্তাবনা নাই, কেন না উহা কখন পুনমুদিত হয় নাই। অনেকেই দীনবন্ধু প্রথম রচনার ছুষ্ঠ এক পংস্তি শুনিলেও প্রীত হইতে পারেন ; এজন্ত স্থৃতির উপর নিভর করিয়া কবিতা হইতে ভূই পংক্তি উদ্ধত করিলাম। উহার আরম্ভ এইরূপ-_ মানব-চরিত্র-ক্ষেত্রে নেত্র নিক্ষেপিয়। | ছুঃখানলে দহে দেহ, বিদরয়ে হিয়া একটী কবিতা এই--- যে দোষে সরস হয় সেজনে সরস। যে দোষে বিরস হয় সে জনে বিরস আর একটী-_ যে নয়নে রেখু অণু অসি অনুমান বায়সে হানিবে তায় তীক্ষ চঞ্চ-বাণ ইত্যাদি

দীনবদ্ধু-জীবনী।

সেই অবধি, দীনবন্ধু মধ্যে মধ্যে প্রভাকে কবিত। লিখিতেন। তাহার প্রণীত কবিত1 সকল পাঠক -সমাঁজে আদৃত হইত। তিনি সেই তরুণ বয়সে যে কবিত্বের পরিচয় দিয়াছিলেন, তাহার অসাধারণ “কবধুনী” কাব্য এবং “দ্বাদশ কবিতা” সেই পরিচয়ান্ুূপ হর নাই তিনি ছই ব২সর, জামাঁই-ষ্ীর সময়ে, “জামাই-ষষ্ঠী” নাষে ছুইটি কবিতা লেখেন। এই ভ্ুইটি কবিত। বিশেষ প্রশং সিত এবং আঁগ্রহাতিশয্যের সহিত পঠিত হ্ইয়াছিল। দ্বিতীয় বৎসরের “জীমাই-যষ্টা” যে সংখ্যক প্রভাকরে প্রকাশিত হয়ঃ ভাহ। পুণযুর্রিত করিতে টা সেই সকল কবিতা যেদপ প্রশংসিত হইয়াছিল, "সুরধুনা” কাব্য

বং “থ্াদশ কবিতা” সেপ্ষপ প্রশংসিত হনব নাই। তাহ!র কারণ সহজেই জাভা হাস্তরসে দীনবন্ধুর অদ্বিতীয় ক্ষমতা ছিল। “জাঁমাই-যঠী”তে হাস্তরস প্রধান স্ুরধুনী কাব্যে ছাদশ কবিতাব হাস্তব্বসের আশ্র মাত নাই। প্রভাকরে দ্রীনবদ্ধ যে সকল পবিতা লিখিয়াছিলেন, তাহ। পুনমুদ্তি হইলে বিশেষরূপে আঁদৃত হইবার সশ্থাবনা।

আমরা দেখিয়াছি, কোন কোন সংবাদ-পঞ্জে “কীপেজার কবিতা সুদধেব” উল্লেখ হইয়াছে 7" তাহাতে গৌরবের কথ। কিছু নাই) সে সম্বন্ধে আমি কিছু বলিব না। তরুণ বয়সে গালি দিতে কিছ় ভাল লাগে নিষ্ভালয়ের ছাঁত্রগণ প্রায় পর্ম্পরকে গালি দিয়া থাকে দানবন্গ চিরক!ল বৃহস্প্রিন। এজন্য এটি ঘটিয়াছিল।

দীনবন্ধ প্রভাকনে “বিগর কাষিন।” নামে একটি ক্ষুদ উপাখ্যান কাবা প্রকাশ করিযাছিলেন। নায়কের মাম ধিজধ, মাঘিকার নাম কামিনা। তাহার, বোধ হর, দশ বার ব২সর পরে নবীন ভতপস্থিনী” লিখিভ হয়। “নবীন তপস্থিনী"্র নারকের ন।য্‌€ বিজয়, নাধিকাও কামিনী চপিব্রগত, ভপাখ্যানকাব্য নাটকের নায়ক নায়িকার মধ্যে বিশেষ প্রভেদ নাই এই ক্ষুদ্র উপাখ্যান কাব্যখানি সুন্দর হইয়াছিল

দীনবন্ধু হেয়ারের স্কুল হইতে হিন্দু কালেজে যান এবং তথায় ছাত্রবৃত্তি গ্রহণ করিয়া কয় বৎসর অধ্যয়ন করেন। তিনি কালেজের একজন উতকুষ্ট ছাত্র ধলিয়। গণ্য ছিলেন

দীনবন্ধু পাঠ্যাবস্থার কথ! আমি বিশেষ জাঁনি ন।, তত্কালে তাহার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ পরিচয় ছিল না।

বোধ হয় ১৮৫৫ সালে, দীনবন্ধু কালে্জ পরিত্যাগ করিয়। *৫*২ বেতনে

দীনবন্ধু-জীবনা

পাটনার পোষ্টমাষ্টারের পদ গ্রহণ 'করেন। এঁকর্েতিনি ছত্ব মাস নিযুক্ত থাকিয়া! সুখ্যাতি লাত করেন দেড় ব্সর পরেই তাহার পদবৃদ্ধি হইয়াছিল তিনি উডিষ্যা বিভাগের ইন্স্পেক্টিং পো্টমাস্টান্র হইর। বান। পদব্বদ্ধি হইল বটে, কিন্তু তখন বেতন রদ্ধি হইল ন!;? পরে হইয়াছিল

এক্ষণে মনে হর, দ্ানবন্ধ চিনদিন দেড়ণত টাকার পোগ্ুমাষ্টীর থাকিতেন

ভাল ছিল,ষ্টাহার ইন্স্পেকটিং পোষ্টমাষ্টার ওয়। মঙ্গলের বিষয় হয় নাই | এই পদের বারের নিরম এই ছিল থে, ভহাদিগকে অবিরত নানাস্থানে ভ্রমণ কর্ির। পোষ্টি আপিপের কারা সকলের তঙ্গাববারণ করিতে হইত এক্ষণে ইহীার। ছর মাস হেডকোরাটবে ভারা হতে পারেন। পুর্বে দে নিম ছিল না। সন্বত্সরই ভ্রমণ করিহে হইত কোন স্তানে এক দিন, কোন স্থানে ছুই দ্রিন, কৌন স্থানে তিন দিন এইরূপ কাপ মা অবশ্ঠথিতি। বসব বৎসর কমাগত এইরূপ পরিশ্রমে লৌহের শরীণত ভগ্র হইয়া যায় নিয়ত আবর্ভনে লোহার চক্র ক্ষ প্রাপ্ত হয়। ধাঁনবন্ধু শরীরে আর সে পরিএ্রষ সহিল না; বঙ্গদেশের ভরনুষ্টবশতঃই তিনি ইন্প্পেক্টিং পোষ্টমাষ্টার হইয়াছিলেন।

ইহাতে আমাদের মৃলধন নষ্ঠ হইয়াছে বটেঃকিন্ত কিছু-লাভ হয় নাই এমত নহে। উপহাসনিপুণ লেখকের একটা বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন নান) প্রকার মন্তষোর চরিত্রের পণ্যাশোচনাতেই সেই শিক্ষ। পাওয়। যায় দীনবন্ধু নান। দেশ এমণ করির। নানাবিধ চরিঝের মন্তযোর সংশর্শে আপিয়াছিলেন ভজ্জনিত শিক্ষা গুণে তিনি নানাপিশ বুহশ্তজনক্ চরিএ স্থজনে সক্ষম হইয়া- ছিলেন হচাহার প্রণীত নাটপ সকলে যেব্ধপ চরিএটেবচিত্র আছে, তাহ বাঙ্গালা সাঁহতো বিরল

উডিষ্য। বিভাগ হইতে দানবন্ধ নদীর। বিভাগে প্রেরিভ হয়েনঃ এবং তথা হইতে ঢাক1 বিভাগে গমন করেন এই সময়ে নীল-বিষরক গোলযোগ উপ- স্থিত হর দীনবন্ধ নান। স্তনে পরিভ্রমণ করিয়। নীলকরদিগের দৌরাজ্স বিশেষরূপে অবগত হইয়াছিলেন। তিনি এই সময়ে “নীল-দর্পণ” প্রণয়ন করিয়া, বঙ্গীয় প্রজাগণকে অপবিশোধনীয় ধণে বঞ্ধ করিলেন

দ্রীনবন্ধু বিলক্ষণ জানিতেন যে, তিনি যে নীল-দর্পণের প্রণেতা কথা ব্যক্ত হইলে. তাহার অনি ঘটিবার সম্থাবন।। যেসকল ইংরেজেত্র অধীন হইয়! তিনি কম্ম করিতেন, হাহার। নালকরের সুঙ্দ্‌ বিশেষ, পোষ্ট আপি- সের কার্যে নীলকর প্রভৃতি অনেক ইংরেজের সংস্পর্শে সর্বদ। আসিতে হয়

দীনবন্ধু জীবনী |

তাহার। শক্রত। করিলে বিশেষ অনিষ্ঠ করিতে পাঁরুক ন! পারুক, সর্বদ। উদ্ধি্ন করিতে পারে ; সকল জানিয়াঁও দীনবন্ধু নীল-দর্পণ প্রচারে পরাদ্ুখ হয়েন নাই নীল দর্পণে গ্রন্থকারের নাম ছিল ন। বটে, কিন্তু গ্রন্থকারের নাম গোপন করিবার জন্ দীনবন্ধু অন্য কোন প্রকার যত্র করেন নাই। নীল-দর্পণ প্রচারের পরেই বঙ্গদেশের সকল লোকেই কোন প্রকারে না কোন প্রকারে জানিয়াছিল বে, দীনবন্ধু ইহার প্রণেত!

দ্রীনবন্ধু পরের ছুঃখে নিতান্ত কাতর হইতেন, নীল-দর্পণ এই গুণের ফল। তিনি বঙ্গদেশের প্রজাগণের ছুঃখ সঙ্গদরতার সহিত সম্পূর্নরূপে অনুভূত করির।- ছিলেন বলিয়াই নীল-দর্পণ প্রণীত প্রচারিত হইরাছিল। (সকল মনুষ্য পরের ছুঃখে কাতর হর, দীনবন্ধু তাহার মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন। শ্তাহার হৃদয়ের অসাধারণ গুণ এই ছিল যে, যাহার ছুঃখ, সেযেঞ্প কাতর হইভ. দীনবন্ধু তদ্ধপ ব। ততোধিক কাতর হইতেন। হ্হার একটা অপুব্ব উদাহরণ আমি প্রত্যক্ষ করিরাছি | একদ। ঠিনি যশেহরে আমার পাসার অবশ্ঠিতি করিতেছিলেন। রাঞ্রে তাহার কোন বন্ধুর কোন উতকট পীড়ার উপক্রম হইল। ঘিনি পীড়ার আশক্ক। করিতেছিলেন, তিনি দানবন্ধকে জাগরিত করিলেন, এবং পাড়ার আশঙ্কা জানাইলেন। শুনিয়! দীনবন্ধু মুস্ছিত হইলেন যিনি স্বব্ং পীড়িত বলির! সাহায্যার্থ দীনবন্ধকে জ!গাইয়াছিলেন, তিনিই আবার দীনবন্ধর শুশষায় নিযুক্ত হইলেন। ইহ! আমি সচন্দে দেখিয়াছি সেই দিন জানিয়াছিলাম যে, অন্য যাহার যে গুণ থাকুক, পরের ছুঃখে দীনবদ্ধুর ন্ঞার কেহ কাতর হয় না। দেই গুণের ফল নীল-দরণ।

নীল-দর্পণ ইংরেজিতে অন্ুবাদ্িত হইরা ইংলগ্ডে যায় লং সাহেব তৎ- প্রচারের জন্য সুপ্রীম কোটের বিচারে দওনীয় হইয়। কারাবদ্ধ হয়েন। সীটনকার সাহেব তত্প্রচার জন্য অপদস্ক হইয়ছিলেন। এসকল বৃত্তান্ত সকলেই অবগত আছেন

এই গ্রন্থের নিমিত্ত লং সাহেব কারাবদ্ধ হইরাছিলেন বণিয়াই হউক, অথবা ইহার কোন বিশেষ গুণ থাকার নিমিত্তই হউক, নীল-দর্পণ ইয়ুরোপের অনেক ভাষায় অন্ুবাদিত পঠিত হইয়াছিল এই সৌভাগ্য বাঞঙ্গালার আর কোন গ্রন্েরই ঘটে নাই গ্রন্থের সৌভাগ্য যতই হউক, কিন্তু যেষে ব্যক্তি ইহাতে লিপ্ত ছিলেন, প্রায় তাহারা সকলেই কিছু কিছু বিপদগ্রস্ত হইয়া- ছিলেন ইহার প্রচার করির। লং সাহেব কারাবদ্ধ হইয়াছিলেন; সীটনকার

দীনবন্ধু-জীবনী।

অপদস্থ হইয়াছিলেন। ইহার ইংবেজি অনুবাদ করিধ। মাইকেল মধুনুদন দত্ত গে।পনে তিরস্কত অবমানিত হইয়াছিলেন এবং শুনিয়াছি শেষে তাহার জীবন নির্বাহের উপায় সুপ্রীম কোটের চাকুরি পর্য্যন্ত ত্যাগ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। গ্রন্থকর্তী নিজে কারাবদ্ধ কি কর্মচ্যুত হয়েন নাই বটে, কিন্তু তিনি ততোধিক বিপদ্গ্রস্ত হইয়াছিলেন এক দিন রাত্রে নীল-দর্পণ লিখিতে লিখিতে দীনবন্ধু মেঘন। পার হইতেছিলেন। কুল হইতে প্রায় ছুই ক্রোশ দুরে গেলে নৌকা হঠাৎ জলমপ্র হইতে লাগিল দাড়ী, মাজী সকলেই সন্ভরণ আরন্ত করিল; দীনবন্ধু তাহাতে অক্ষম দীনবন্ধু নীল-দর্পণ হস্তে করিয়া জলম্জ্জনোন্ুখ নৌকার নিশ্তন্ধে বসিয়। রহিলেন। এমন সময়ে হঠাৎ একজন সন্তরণকারীর পদ মুত্তিক স্পর্শ করিবায় সে সকলকে ডাকিয়। বলিল, “ভয় নাই, এখানে জল অল্প, নিকটে অবণ্য চর আছে ।” বাস্তবিক নিকটে চর ছিল, তথায় নৌক1 আনীত হইয়। চরলগ্ হইলে দীনবস্ধু উঠিয়া নৌকার ছাদের উপর বসির! রহিলেন। তখনও সেই আদ্র নীল-দর্পণ তাহার হস্তে রহিয়াছে এই সময়ে মেঘনায় ভাটা বহিতেছিলনসন্বরেই জোয়ার আসিয়। এই চর ডুবিয়া যাইবে এবং সেই সঙ্গে এই জলপুর্ণ ভগ্ন তরি ভাসিরা যাইবে, তখন জীবন রক্ষার উপায় কি হইবে,এই ভাবন। দাঁড়ী,মাঝি সকলেই ভাবিতেছিল,দীনবন্ধু ভাবিতেছিলেন। তখন রাত্রি গভীর, আবার ঘোর অন্ধকার, চারিদিকে বেগবতীর বিষম আোতধ্বনি, কচি মধ্যে মধ্যে নিশাচর পক্ষী্দিগের চীৎকার জীবন ব্রক্ষার কোন উপায় ন৷ দেখিয্না দীনবন্ধু একেব।রে নিরাশ্বাস হইতে- ছিলেন, এমন সময় দূরে দাড়ের শন্দ শুন। গেল। সকলেই উচ্চৈঃস্বরে পুনঃ পুনঃ ডাকিবার় দূরবস্তী নৌকারোহীর। উত্তর দিল, এবং স্বত্বরে আসিব দীনবন্ধু তৎসমভিব্যাহারীদিগকে উদ্ধার করিল।

ঢাকা বিভাগ হইতে, দীনবন্ধু পুনর্ধার নদীয়া প্রত্যাগমন করেন ফলতঃ নদীর়। বিভাগেই তিনি অধিককাল নিযুক্ত ছিলেন; বিশেষ কার্য্য-নির্ববাহ জন্য তিনি ঢাক? বা অন্যত্র প্রেরিত হইতেন

ঢাকা! বিভাগ হইতে প্রত্যাগমন পরে দীনবদ্ধু “নবীন তপন্থিনী” প্রণয়ন করেন। উহা! কৃষ্ণনগরে মুদ্রিত হর মুদ্রাঘন্ত্রটী দীনবন্ধু প্রন্থতি কয়েক জন রুতবিগ্ের উচ্ভে[গে স্থাপিত হইয়াছিল, কিন্তু স্থায়ী হয় নাই

দীনবন্ধু নদীয়! বিভাগ হইতে পুনব্বার ঢাক। বিভাগে প্রেরিত হয়েন। আবার ফিরিয়। আসিয়। উড়িষ্যা বিভাগে প্রেরিত হয়েন। পুনব্বার নদীয়া

দীনবন্ধু-জীবনী |

বিভাগে আইসেন ।'ক্লষ্চনগরেই তিনি অপিক কাল অবস্থিতি করিয়াছিলেন সেখানে একটী বাড়ী কিনিয়াছিলেন | সন ১৮৬৯ সালেন্র শেষে ব। সন ১৮৭০ সালের প্রথমে তিনি কঞ্চনগর পরিত্যাগ করিয়া, কলিকাতায় সুপরনিউমররি ইনস্পেক্টিং পোষ্টমাষ্টার নিযুক্ত হইয়া আইসেন। পোষ্টমাষ্টার জেনেরলের সাহাধ্যই পদের কাধ্য। দীনবন্ধুর সাহাধ্যে পোষ্ট আছফিসের কার্ধা কয় বঙ্সর অতি সুচারুরূপে সম্পাদিত হইতে লাগিল ১৮৭১ সালে দীনবন্ধু লুশাই যুদ্ধের ডাকে বন্দোবস্ত করিবার জন্ত কাছাড় গমন করেন অভথায় সেই শুরুতর কার্ধ্য সম্পন্ন করিয়। অল্পকাল মধ্যে প্রতাশাগমন করেন

কলিকাতায় অবশ্থিতি কালে, তিনি “রায়বাহাছবর,” উপাধি প্রাপ্ত হইয়া- ছিলেন। এই উপাধি ধিনি প্রাণ্ড হয়েন, তিনি আপনাকে কত দূর র্ুতার্চ মনে করেন বলিতে পারি নাঁ। দীনবন্ধুর অদ্ষ্টে পুরস্কার ভিন্ন আর কিডু ঘটে নাই কেনন। দীনবন্ধু বাঙ্গালিকূলে জনাগ্রহণ করিয়াছিলেন। তিনি প্রথম শ্রেণীর বেতন পাইতেন বটে, কিন্তু কালসাহাঁযো প্রথম শেনণীর বেতন চতুষ্পদ জন্তদিগেরও প্রাপ্য হইঘ। পাকে পুথিবীর স্বতেই প্রথমশ্রেশীভূক্ত গর্দভ দেখা যায়|.

দীনবদ্ধ এবং স্মর্যনাবার়ণ এউ দুইজন পোগাল পিভাগের কপ্মচাহীদিগের মধ্যে সর্বাপেক্ষা স্মদক্ষ বলিয়া পণ্য ছেলেন ! সম্্যনবানণ বান আসামে কার্যের গুরুভার লইয়া তথায় জবস্থিতি করিতেন £ অন্ত যেখানে কোন কঠিন কার্ধ্য পড়িত, দীনবন্গ সেইখানেই প্রেরিভ হইতেন। এইরূপ কার্যে ঢাকা, উড়িষ্যা, উত্তর পশ্চিম, দারঞিলিঙ্গ, কাছা, প্রভৃতি স্থানে সর্দাদ। ঘাইতেন। এইরূপে, তিনি বাঙ্গল। উড়িধ্যার প্রার সর্স্থানেই গমন কনিযঘ়াছিলেন, বেহারেরও অনেক স্থান দেখিরাছিলেন। পোষ্ঠীল বিভাগের ষে পরিশ্রষের ভাগ তাহ। তাহার ছিল, পুরস্কারের ভাগ অন্যের কপালে দটিল।

দীনবন্ধুর যেরূপ কাধ্যদক্ষতা এবং বহছুদর্শিত। ছিল, ভাহাতে তিনি যদি বাঙ্গালী না হইতেন, তাহ] হইলে শুত্যুর অনেক দিন পৃব্বেই তিনি পোস্টমাস্টার জেনেরল হইতেন, কালে ডাইরেঞ্টর জেনেন্ল হইতে পারিতেন। কিন্তু যেমন শতবার ধৌত করিলে অঙ্গারের মালিন্ত যাঁয় না, তেমনি কহারও কাহারও কাছে সহজ গুণ থাকিলেও কৃষ্ণবর্ণের দেব যায না, 011211/৮ যেমন সহত্র দৌঁধ ঢাঁকিয়। রাখে, কুঙ্চচন্মে তেমনি স্হত্্র গুণ ঢাকিয়। রাখে

পুরস্কার দূরে থাকুক,শেষাবস্থায় দীনবন্ধু অনেক লাগন! প্রাপ্ত হইয়াছিলেন।

দীনবন্ধু-জীবনী।

পোষ্টমাষ্টার জেনেরল এবং ডাইরেক্টর জেনেরলে বিবাদ উপস্থিত হইল দ্রীনবন্ধুর অপরাধ; তিনি পোষ্টমাষ্টীর জেনেরলের সাহায্য করিতেন এজন্য তিনি কার্ধ্যান্তরে নিযুক্ত হইলেন প্রথম কিছু দিন রেলওয়ের কার্ষ্যে নিযুক্ত হইয়াছিলেন তাহার পরে হাবড়া ভিবিজনে নিযুক্ত হয়েন। সেই শেষ পরিবর্তন

শ্রমাধিক্যে অনেক দিন হইতে দীনবন্ধু উৎকটবোগাক্রান্ত হইয়াছিলেন। কেহ কেহ বলেন, বহুমূত্র রোগ প্রায় সাংঘাতিক হয়। সেকথা সত্যকিনা ব্রা যায় না, কিন্তু ইদানীং যনে করিয়াছিলাম যে, দীনবন্ধু বুঝি রোগের হাত হইতে মুক্তি পাইবেন। রোগাক্রান্ত হইয়। অবধি দীনবন্ধ অতি সাবধান; এবং অবিহিতাচারবঙ্জিত হইয়াছিলেন। অতি অল্প পরিমাণে অহিফেন সেবন আরম্ভ করিয়াছিলেন তাহাতে রোগের কিঞ্চিৎ উপশম হইয়াছে বলিতেন। পরে সন ১২৮০ সালের আঙিন মাসে অকন্মৃৎ বিস্ফোটক কর্তৃক আক্রান্ত হইয়া] শঘ্যাগত হইলেন ভাঙার মুত্যুর বৃত্তাপ্ত সকলে অবগত আছেন বিস্তারিত পেখার আবশ্যক নাই লিখিতেও পারি না। যদি মনুষ্যের প্রার্থন। সফল হইবার সম্তাবন। থাকিত, তবে প্রার্থনা করিতাষ যে এরূপ সুঙ্গদের মৃত্যুর কথা কাহাকেও যেন লিখিতে না হয়।

নবীন তপস্ষিনীর পর “বিষে পাগল! বুড়ে।” প্রচার হয়। দীনবন্ধুর অনেক- গুলিন গ্রন্থ প্রত ঘটনামূলক এবং অনেক জীবিত ব্যক্তির চরিত্র ্াহার প্রনীত চরিত্রে অনুকৃত হইয়াছে নীল-দর্পণের অনেকগুলি ঘটনা প্রকৃত; “নবীন তপস্থিনীর” বড় রাণী ছোট বাণীর বৃত্তান্ত প্রকৃত “সধবার একা- দশীর” প্রায় সকল নারক নায়িকাগুলিন জীবিত ব্যক্তির প্রতিকৃতি ; তদ্বর্ণিত ঘটনাগুলির মধ্যে কিয়দংশ প্রকৃত ঘটনা “জামাই-বারিকের” দুই স্ত্রীর বৃত্তান্ত প্রকৃত। “বিয়েপাগলা বুড়ো” জীবিত ব্যক্তিকে লক্ষিত করিয় লিখিত হইঘ্নাঁছিল

প্রত ঘটন।, জীবিত ব্যক্তির চরিত্র, প্রাচীন উপন্তাস, ইংরেজি গ্রন্থ, এবং “প্রচলিত খোসগল্প”হইতে সারাদ!ন করিয়। দীনবন্ধু তাহার অপুর্ব চিত্তরঞ্জক নাটক সকলের সৃষ্টি করিতেন। “নবীন তপস্বিনীতে” ইহার ভত্তম দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। রাজা রমণীমোহনের বৃতান্ত কতক প্রকত। হোদলকুৎকুতের ব্যাপার প্রাচীন উপন্যাসমূলক ; “জলধর” “জগদত” [277 ৬1৮৪৪ 91 10450 হইতে নীত

১৩ দীনবন্ধু-জীবনী |

বাঙ্গালি-পাঠক মধ্যে নিতান্ত অশিক্ষিত অনেক আছেন ভাহার। ভাবি বেন, যদি দীনবন্ধুর গ্রন্থের মূল প্রাচীন উপন্তাঁসে, ইংরেজি গ্রন্থে বা প্রচলিত গল্পে আছে; তবে আর তাহার গ্রন্থের প্রশংস! কি? তাহারা ভাবিবেন, আমি দীনবন্ধুর অপ্রশংসা করিতেছি সম্প্রদায়ের পাঠকদিগকে কোন কথ। বুঝাইয়া বলিতে আমি অনিচ্ছুক, কেননা জলে আলিপনা সম্ভবে না সেক্ষ- পীয়রের প্রায় এমন নাটক নাই, যাহা। কোন প্রাচীনতর-গ্রন্থযুলক নহে। স্কটের অনেকগুলি উপন্তাঁস প্রাচীন কথা ব' প্রাচীন গ্রন্থ-মূলক। মহাভারত, রামায়ণের অনুকরণ ইনিয়দ্‌, ইলিয়দের অন্তকরণ। ইহার মধ্যে কোন্‌ গ্রন্থ অপ্রশংসনীয় $

“সধবার একাদশী” “বিয়েপাগল! বুড়ো"'র পরে প্রকাশিত হইয়াছিল, কিন্তু উহ1 ততপুর্ধে লিখিত হইয়াছিল "সধবার একাদশীর” যেমন অসাধারণ গুণ আছে, তেমনি অনেক অসাধারণ দোষও আছে। এই প্রহসন বিশুদ্ধ রুচির অন্থমোদ্িত নহে, এই জন্য আমি দীনবন্ধৃকে বিশেষ অনুরোধ করিয়া- ছিলাম, ষে ইহার বিশেষ পরিবর্তন ব্যতীত প্রচার ন। হয কিছু দিন মাত্র অনুরোধ রক্ষ। হইয়াছিল অনেকে বলিবেন, অনুরোধ রক্ষ। হয় নাই ভালই হইয়াছে, আমরা “নিমচাদকে” দেখিতে পাইয়াছি অনেকে ইহার বিপরীত বলিবেন।

“লীলাবতী”বিশেষ যত্রের সহিত রচিত, এবং দীনবন্ধু অন্ঠান্য নাটকাপেক্ষ! ইহাতে দোষ অল্প এই সময়কে দীনবন্ধুর কবিহ-স্ষ্যের মধ্যাহ্ছকাল খল। যাইতে পারে। ইহার পর হইতে কিঞ্চিৎ তেজঃক্ষতি দেখ। যায়। এরূপ উদাহরণ অনেক পাওয়া যায় | স্কট প্রথষে পদ্যগ্রস্থ লিখিতে আরন্ত করেন। প্রথম তিন খানি কাব্য অত্যুত্কৃষ্ট হয়, 7,895 00135 1,279 নামক কাব্যের পর আর তেমন হইল ন1। দেখিয়া, স্কট পদ্য লেখ। ত্যাগ করিলেন, গগ্ভকাব্য লিখিতে আরম্ভ করিলেন গগ্ভক।ব্য-লেখক বলিয়। স্কটের যে যশ, তাহার মূল প্রথম পনের বা যষোলখানি নবেল। 1210৮) নামক গ্রন্থের পর স্কটের আর কোন উপন্যাস প্রথম শ্রেণাতে স্থান পাইবার যোগ্য হয় নাই। মধ্যাহ্নের প্রথর রৌদ্রের সঙ্গে সন্ধ্যাকালীন ক্ষীণালোকের যে সম্বন্ধ; [৮2011)09 এবং 1[67115010) প্রভৃতির সঙ্গে স্কটের শেষ ছুইখানি গগ্ভকাব্যের সেই সম্বন্ধ

'লীলাবতীর” পর দীনবন্ধুর লেখনী কিছুকাল বিশ্রাম লাভ করিয়াছিল সেই বিশ্রামের পর “সুরধুনী" কাব্য "জামাইবারিক” এবং “দ্বাদশ কবিতা”

ঈীনবন্ধু-জীবনী | ১১

অতি শীঘ্র শীঘ্র প্রকাশিত হর। “সুরধুনী” কাব্য অনেক দিন পূর্বে লিখিত হইয়াছিল ইহার কিয়দংশ “বিষ্বেপাগল। বুড়ে”রও পূর্বে লিখিত হইয়াছিল ইহাও প্রচার না হয়, আমি এমত অনুরোধ করিয়াছিলাম,_- আমার বিবেচনায় ইহ! দীনবন্ধর লেখনীর যোগ্য হয় নাই বোধ হয় অন্তান্ঠ বন্ধুগণও এইরূপ অনুরোধ করিয়াছিলেন এই জন্য ইহ। অনেক দিন অপ্রকাশ ছিল।

দীনবন্ধুর মৃত্যুর অল্পকাল পুর্বে “কমলেকামিনী” প্রকাশিত হইয়াছিল। যখন ইহ! সাঁধারণে প্রচারিত হয়, তখন তিনি রুগ্শয্যায়

আমি দীনবন্ধুর গ্রন্থ সকলের কোন সমালোচনা! করিলাম না। গ্রাস্থ- সমালোচন! প্রবন্ধে উদ্দি&ট নহে সমালোচনার সময়ও নহে দীনবন্ধু যে স্থলেখক ছিলেন; ইহ! সকলেই জানেন, আমাকে বলিতে হইবে না। তিনি ঘে অতি সুদক্ষ রাজকর্মচারী ছিলেন, তাহা কিঞ্চিৎ উল্লেখ ফরিয়াছি | কিন্ত দীনবন্ধুর একটি পরিচয়ের বাকি আছে তাহার সরল, অকপট, ক্নেহময় জদয়ের পরিচয় কি প্রকারে দিব? বঙ্গদেশে আজ কাল গুণবান্‌ বাক্তির অভাব নাই, সুদক্ষ কর্মচারীর অভাব নাই, স্থলেখকেরও নিতান্ত অভাব নাই, কিন্ত দ্রীনবন্ধুর অন্তঃকরণের মত অন্তঃকরণের অভাব বঙ্গদেশে কেন -মনুষ্যলোকে _-চিরকাল থাকিবে সংসারে ক্ষুত্র কীট হইতে সম্রাট পর্যান্ত সকলেরই এক স্বভাব, অহঙ্কার, অভিমান, ক্রোধ; স্বার্থপরতা, কপটতায় পরিপূর্ণ এমন সংসারে দীনবন্ধুর শ্ঠায় রঃই অমূল্য রহ

সে পরিচয় দিবারই ব। প্রয়োজন কি? এই বঙ্গদেশে দীনবন্ধকে কে বিশেষ না জানে ? দাঁরজজিলিঙ্গ হইতে বরিশ!ল পর্ম্যন্ত, কাছাড় হইতে গঞ্জাম পর্য্যন্ত, ইহার মধ্যে কয়জন ভদ্রলোক দীনবন্ধর বন্ধুমধো গণ্য নহেন। কয়জন তাহার স্বভাবের পরিচয় না জানেন ? কাহার নিকট পরিচয় দিতে হইবে ?

দীনবন্ধু যেখানে না গিয়াছেন বাঙ্গালার এমত স্থান অন্পই আছে। যেখানে গিয়াছেন সেই খানেই বন্ধু সংগ্রহ করিয়াছেন যে তাহার আগমন-বার্তী শুনিত, সেই তাহার সহিত আলাপের ভরন্ঠ উৎসুক হইত যে আলাপ করিত, সেই তাহার বন্ধু হইত। তাহার ন্যায় স্ুরসিক লোক বঙ্কভূমে এখন আর কেহ আছে কি না বলিতে পারি না। তিনি যে সভার বসিতেন, সেই সভার জীবন- স্বরূপ হইতেন। তীহার সরস, সুমিষ্ট কথোপকথনে সকলেই মুগ্ধ হইত। শ্রোতৃবর্গ, মন্ম্ের ছঃখ সকল ভুলিয়। গিয়া, তাহার সৃষ্ট হান্তরস-সাগরে ভাসিত | তাহার প্রণীত গ্রন্থ সকল, বাঙ্গালা ভাবায় সব্বোত্কষ্ট হাস্তরসের গ্রন্থ বটে,

শজাছি

১২ দীনবন্ধু-জীবনী

কিন্ত তাহার প্রকৃত হান্তরসপটুতার শতাংশের পরিচয় তাহার গ্রন্থে পাওয়। যায় না। হাস্তরসাবতারণায় তাহার যে পটুতা, তাহার প্ররুত পরিচয় তাহার কথোপকথনেই পাওয়া যাইত। অনেক সময়ে, তাহাকে সাক্ষাৎ মৃষ্তিমান্‌ হাম্তরস বলিয়া বোধ হইত দেখা গিয়াছে যে, অনেকে “আর হাসিতে পারি না” বলিয়া তাহার নিকট হইতে পলায়ন করিয়াছে হাস্তরসে তিনি প্রকৃত এন্্রজালিক ছিলেন

অনেক লোক আছে যে, নিব্োধ অথচ অত্যন্ত আত্মাভিমাঁনী, এরূপ লোকের পক্ষে দীনবন্ধু সাক্ষাৎ যম ছিলেন। কদাচ তাহাদিগের আত্মীভিমানের প্রতিবাদ করিতেন না, বরং সেই আগুনে সাধ্যমত বাতাস দিতেন নির্বোধ সেই বাঁতাসে উন্মন্ত হইয়। উঠিত | তখন তাহার রক্ষভঙ্গ দেখিতেন এরূপ লোক দীনবন্ধুর হাতে পড়িলে কোৌনরূপে নিষ্কৃতি পাইত ন!।

ইদানীং কয়েক বৎসর হইল, তাহার হাস্তরসপটুতা ক্রমে মন্দীভূত হইয়। আসিতেছিল। প্রার ব্সরাধিক হইল, এক দিন তাহার কোন বিশেষ বন্ধু জিজ্ঞাস! করিরাছিলেন “দীনবন্ধু, তোমার সে হাস্তরস কোথ। গেল ? তোমার রস শুখাইতেছে»*তুমি আর অধিক কাল বাচিবে না” দাঁনবন্ধু কেবলমাত্র উত্তর করিলেন, "কে বলিল?” কিন্তু পরক্ষণেই অন্যমনস্ক হইলেন। এক দিবস আমরা একত্রে রাত্রিযাপন করি তাহার রস উন্দীপন-শক্তি শুকাইয়াছে কিনা আপনি জানিবার নিমিত্ত একবার সেই রাত্রে চেষ্ট। করিয়াছিলেন ; সে চেষ্টা নিতান্ত নিশ্ষল হয় নাই রাত্রি প্রায় আড়াই প্রহর পর্য্যন্ত অনেক - গুলি বন্ধুকে একেবারে মুগ্ধ করিয়াছিলেন। তখন জাঁনিতাঁম না যে সেই তাহার শেষ উদ্দীপন তাহার পর আর করেক বর দিবারাত্রি একত্রে বাস করিয়াছি, কিন্তু এই রাত্রের শ্তায় আর তাহাকে আনন্দ-উৎ্কুল্ল দেখি নাই। তাহার অসাধারণ ক্ষমতা ক্রমে হুর্বল হইতেছিল। তথাপি তাহার ব্যঙ্গশক্তি একেবারে নিস্তেজ হয় নাই। মৃত্যুশযায় পড়িয়াও তাহা ত্যাগ করেন নাই অনেকেই জানেন যে, তাহার মৃত্যুর কারণ বিস্ফোটক, প্রথমে একটী পৃষ্ঠ দেশে হয়, তাহার কিঞ্চিৎ উপশম হইলেই আর একটি পশ্চাত্ভাগে হইল তাহার পর শেষ আর একী বাঁমপদে হইল। এই সময় তাহার পুক্ধোক্ত বন্ধুটী কার্য্যস্থান হইতে তাহাকে দেখিতে গিয়াছিলেন। দীনবন্ধু অতি দৃরবর্তাঁ মেঘের ক্ষীণ বিদ্যুতের ন্যাঁয় ঈষৎ হাসিয়া! বলিলেন “ফোড়া এখন আমার পায়ে ধরিয়াছে।”

দীনবন্ধু-জীবনী। ১৩

মনুষ্যযাত্রেরই অহঙ্কার আছে ;--দীনবন্ধুর ছিল না। মনুষ্যমাত্রেরই রাগ আছে ;-_দীনবন্ধুর ছিল না৷ দীনবন্ধু কোন কথ! আমার কাছে গোপন ছিল না, আমি কখন তাহার রাগ দেখি নাই। অনেক সময়ে তাহার ক্রোধা- ভাব দেখিয়] তাহাকে অন্থযোগ করিয়াছি, তিনি রাগ করিতে পারিলেন ন৷ বলিয়। অপ্রতিভ হইয়াছেন অথব ক্রুদ্ধ হইবার জন্ঠ বহর করির।, শেষে নিস্ফল হইয়। বলিয়াছেন “কই, রাগ যে হয় না।”

তাহার যে কিছু ক্রোধের চিহ্ন পাওয়। যায়,তাহ। জমাই-বারিকের “ভোত। রাম ভাটের” উপরে যেমন অনেকে দীনবন্ধুর গ্রন্থের প্রশংস। করিতেন, তেমনি কতকগুলি লোক তাহার গ্রন্থের নিন্দক ছিল। যেখানে যশ সেই খানেই নিন্দা, সংসারের ইহা নিয়ম পৃথিবীতে যিনি যশম্বী হইয়াছেন, তিনিই সম্প্রদায় বিশেষ কর্তৃক নিন্দিত হইয়াছেন। ইহার অনেক কারণ আছে প্রথম, দোষশন্য মনুষ্য জন্মে না; ধিনি বহু গুণবিশিষ্ট, তাহার দৌঁষ- গলি, গুণসানিধ্য হেতু; কিছু অধিকতর স্পষ্ট হয়, সুতরাং লোকে তৎ্কীর্ভনে প্রবৃত্ত হয়। দ্বিতীয়, গুণের সঙ্গে দোষের চিরবিরোধঃ দোষযুক্ত ব্যক্তিগণ গুণশা'লী ব্যক্তির সুতরাং শত্রু হইয়া পড়ে তৃতীয়, কর্মক্ষেত্রে প্রবৃত্ত হইলে কাঁধ্যের গতিকে অনেক শক্র হয়; শক্রগণ অন্য প্রকারে শক্রতা সাধনে অসমর্থ হইলে নিন্দার দ্বারা শত্রুতা সাঁধে। চতুর্থ, অনেক মন্ুষ্যের স্বভাবই এই, প্রশংসা অপেক্ষা নিন্দা করিতে শুনিতে ভালবাসে ; সামান্য ব্যক্তির নিন্দার অপেক্ষ। যশস্বী ব্যক্তির নিন্দা বক্তা শ্রোতার সুখদায়ক | পঞ্চম, ঈর্ষ' মন্রয্যের স্বাভাবিক ধন্ম ; অনেকে পরের ষশে অত্যন্ত কাতর হইয়া যশস্বীর নিন্দ। করিতে প্রবৃত্ত হয়েন। এই শ্রেণীর নিন্দকই অনেক, বিশেষ বঙ্গদেশে।

দীনবন্ধু স্বয়ং নির্বরিরোধ, নিরহঙ্কার এবং ক্রোধশূন্য হইলেও এই সকল কারণে তাহার অনেকগুলি নিন্দক হইয়া উঠিয়াছিল। প্রথমাবস্থায় কেহ তাহার নিন্দক ছিল না, কেনন৷ প্রথমাবস্থাতে তিনি তাদৃশ বশম্বী হয়েন নাই। যখন “নবীন তপন্থিনী” প্রচারের পর তাহার ষশের মাত্র! পুর্ণ হইতে লাগিল, তখন নিন্দকশ্রেণী মাথ। তুলিতে লাগিল দীনবন্ধু গ্রন্থে যথার্থই অনেক দোব আছে,-কেহ কেহ কেবল সেই জন্যই নিন্দা করিতেন। তাহাতে কাহারও আপত্তি নাই ; তবে তাহার! যে দোষের ভাগের সঙ্গে গুণের ভাগ বিবেচনা করেন না, এই জন্যই তাহাদিগকে নিন্দক বলি।

অনেকে দীনবন্ধুর নিকট চাঁক্বীর উমেঘারী করিয়া নিস্কল হইয়া সেই

১৪ দীনবন্ধু-জীবনী

রাগে দীনবন্ধুর সমালোঁচক-শ্রেণী-যধ্যে প্রবেশ করিয়াছিল শ্রেণীস্থ নিন্দক- দিগের নিন্দায় দীনবন্ধু হাঁসিতেন,__নিয় শ্রেণীর সংবাদপত্রে তাহার সমুচিত বণ ছিল, ইহা বলা বাহুল্য কিন্তু “কলিকাঁত। রিবিউপ্র ন্যায় পত্রে কোন নিন্দা দেখিলে তিনি ক্ষুব্ধ এবং বিরক্ত হইতেন। কলিকাতা রিবিউতে “ম্ুরধুনী” কাব্যের যে সমালোচন। প্রকাশিত হইয়াছিল, তাহ। অন্যায় বোধ হয় না। দীনবন্ধু যে ইহাতে বরাঁগ করিয়াছিলেন, ইহাই অনায়। “ভোতারাম ভাট” দীনবন্ধুর চরিত্রে ক্ষুদ্র কলঙ্ক

ইহ] স্পষ্ট করিয়া বল! যাইতে পারে যে'দীনবন্ধু কখন একটাও অসৎ কাধ্য করেন নাই তাহার স্বভাব তাদবশ তেঞ্জস্বী ছিল না বটে, বন্ধর অন্থরোধ ব। সংসর্গদোষে নিন্দনীয় কার্য্যের কিঞ্চিৎ সংস্পর্শ তিনি সকল সমরে এড়াইতে পারিতেন না; কিন্তু যাহ অসৎ, যাহাতে পরের অনিষ্ট আছে, যাহা পাপের কার্য, এমত কার্ধা দীনবন্ধু কখনও করেন নাই। তিনি অনেক লোকে উপকার করিয়াছেন,তাহার অনুগ্রহে বিস্তর লোকের অন্গের সংস্থান হইয়াছে

একটি ছল সুখ দীনবন্ধুর কপালে ঘটিয়াছিল। তিনি সাধবী ন্নেহশালিনী পতিপরায়ণ! পত্রীর স্বামী ছিলেন। দীনবন্ধুর অল্প বয়সে বিবাহ হর নাই। হুগলীর কিছু উত্তর বংশবাটা গ্রামে তাহার বিবাহ হয়। দীনবন্ধু চিরদিন গৃহ- সুখে সুখী ছিলেন। দম্পতা-কলহ কখন ন। কখন সকল ঘরেই হইব! থাকে, কিন্ত কম্মিন্‌ কালে মুহূর্ত নিমিত্ত ইহাদের কথাস্তর হয় নাই। একবার কলহ করিবার নিমিত্ত দীনবন্ধু দ্রঢপ্রতিজ্ঞ হইয়াছিলেন, কিন্তু প্রতিজ্ঞা বৃথা হইয়াছিল। বিবাদ করিতে পারেন নাই। কলহ করিতে গিয়া তিনিই প্রথমে হাসিয়। ফেলেন, কি ভীহার সহধর্মিণী রাগ দেখিয়া উপহাস দ্বারা বেদখল করেন, তাহ এক্ষণে আমার স্মরণ নাই।

দীনবন্ধু আটটা সন্তান রাখির। গিয়াছেন।

দ্রীনবন্ধু বন্ধুবর্গের প্রতি বিশেষ স্নেহবান্‌ ছিলেন। আমি ইহ! বলিতে পারি যে, তাহার ন্যায় বন্ধুর প্রীতি সংস।রের একটা প্রধান সুখ ধীহারা তাহা হারাইয়াছেন, তাহাদের ছুঃখ বর্ণনীয় নহে।

খল

আলী ২৯

দীনবন্ধু-জীবনী। ১৫

২। কবিত্ব।

যে বৎসর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের মৃত্যু হয়, সেই বৎসর মাইকেল মধুহুদন দত্ত প্রণীত “তিলোত্তমাসন্তব কাব্য” রূহস্তসন্দর্ভে প্রকাশিত হইতে আরম্ত হয়। ইহাই মধুকদনের প্রথম বাঙ্গাল। কাব্য তার পরব্সর দীনবন্ধুর প্রথম গ্রন্থ “নীলদর্পণ” প্রকাশিত হয়

সেই ১৮৫৯।৬০ সাল বাঙ্গাল। সাহিত্যে চিরম্মরণীয়--উহ। নূতন পুরাঁতনের সন্ধি স্থল। পুরাণ দলের শেষ কবি ঈখরচন্দ্র অস্তমিত, নৃতনের প্রথম কবি মধুহ্দনের নবোদয়। ঈশ্বরচন্দ্র খাটি বাঙ্গালী, মধুহদূন ডাহা ইংরেজ দীনবন্ধু ইহাদের সন্ধিষ্কল। বলিতে পার যায় যে, ১৮৫৯।৬০ সালের মত দীনবন্ধুও বাঙ্গাল! কাব্যের নূতন পুরাতনের সন্ধিস্থল।

দীনবন্ধু ঈশ্বর গুপ্তের একজন কাব্য-শিষ্ত ঈশ্বরচন্দ্রের কাব্যশিষ্যদিগের মধ্যে দীনবন্ধু গুরুর যতটা কবি-ম্বভাবের উত্তরাধিকারী হইয়াছিলেনঃ এত আর কেহ নহে। দীনবন্ধুর হাস্যরসে ঘে অধিকার, তাহা গুরুর অন্ুকারী। বাঙ্গালীর প্র।ত্যহিক জীবনের সঞ্গে দীনবন্ধুর কবিতার যে ঘনিষ্ট সন্বন্ধ, তাহাও গুরুর অন্ুকারী। যে রুচির জন্য দানবন্ধুকে অনেকে হুবিয়া থাকেন সে রুচিও গুরুর

কিন্তু কবিত্ব সম্বন্ধে গুরুর অপেক্ষা! শিষ)কে উচ্চ মাসন দিতে হইবে ইহা গুরুরও অগৌরবের কথা নহে দীন বন্ধুর হাপ্যরসে অধিকার যে ঈশ্বর গুপ্তের অন্ুুকারী বলিয়াছি, সে কথার তাত্পধ্য এই বে, দীনবন্ধু ঈথ্বর গুপ্তের সঙ্গে এক জাতীয় ব্যঞ্গ-প্রণেতা ছিলেন আগেকার দেশীষ্ব ব্যঙ্গ-প্রণালী এক জাতীয় ছিল--এখন আর এক জাতীয় ব্যঙ্গে আমাদিগের ভালবাসা জন্মিতেছে। আগেকার লোক কিছু মোট কাজ ভাল বাসিত; এখন সরুর উপর লোকের অনুরাগ আগেকার রসিক, লাঠিয়ালের ন্যায় মোটা লাঠি লইয়া সজোরে শত্রুর মাথায় মারিতেন, মাথার খুলি কাটিয়া যাইত। এখনকার রসিকেরা ডাক্তারের মত, সরু লান্সেট খানি বাহির করিয়া, কখন কুচ করিয়া ব্যথার স্থানে বসাইয়া দেন, কিছু জানিতে পার যায় না, কিন্তু হৃদয়ের শোণিত ক্ষত মুখে বাহির হইয়! যায়। এখন ইংরেজ শাসিত সমাজে ডাক্তারের শ্রীরদ্ধি-_ লাঠিয়ালের বড় ছুরবস্থা। সাহিত্য-সমাজে লাঠিয়াল আর নাই, এমন নহে-_ ছুর্ভাগ্যক্রমে সংখ্যার কিছু বাড়িষাছে, কিন্তু তাহাদের লাঠি ঘুণে ধরা, বাহুতে

১৬ দীনবন্ধু-জীবনী।

বল নাই, তাহার! লাঠির ভরে কাতর, শিক্ষা নাই, কোথায় মারিতে কোথায় মারে। লোক হাসায় বটে, কিন্তু হাস্যের পাত্র তাহারা স্বয়ং ঈশ্বর গুপ্ত বা! দীনবন্ধু জাতীয় লাঠিয়াল ছিলেন না। তাহাদের হাতে পাকা বাশের মোটা লাঠি, বাহুতেও অমিত বল, শিক্ষাও বিচিত্র দীনবন্ধুর লাঠির আঘাতে অনেক জলধর রাজীব মুখোপাধ্যায় জলধর রাজীব-জীবন পরিত্যাগ করিয়াছে

কবির প্রধান গুণ, সৃষ্টি-কৌশল। ঈশ্বর গুপ্তের ক্ষমতা ছিল না। দীনবন্ধুর শক্তি অতি প্রচুর পরিমাণে ছিল তাহার প্রণীত জলধর, জগদন্থ। মল্লিক! নিমঠাদ দত্ত প্রভৃতি এই সকল কথার উজ্জ্বল উদাহরণ তবে যাহ! হুগ্মু, কোমল, মধুর, অক্ত্রিম। করুণ, প্রশান্ত - সে সকলে দীনবন্ধুর তেমন অধিকাঁর ছিল ন!। তাহার লীলাবতী, তাহার মালতী, কামিনী, সৈরিন্ধণী, সরলা, প্রভৃতি রসছ্ছের নিকট তাদৃশ আদরণীয়া নহে তাহার বিনায়ক, বমণীমোহন, অরবিন্দ, ললিতমোহন মন মুগ্ধ করিতে পারে না। কিন্ত যাহ1 স্থল, অসঙ্গত, অসংলগ্র, বিপর্ধ্যস্ত, তাহ! তাহার ইঙ্গিত মাত্রেরও অধীন। ওঝার ডাকে ভূতের দলের মত ম্মরণমাত্র সাবি দিয়া আপিয়। দাড়ায়।

কি উপাঁষ লইয়া দীনবন্ধু এই সকল চিত্র রচনা করিয়াছিলেন, তাহার আলোচনা করিলে বিশ্মিত হইতে হয় [বম্ময়ের বিষয় বার্গালা সমাজ সম্বন্ধে দ্রীনবন্ধুর বল্দর্শিত।। সকল শ্রেণীর বাঙ্গালীর দৈনিক জীবনের সকল খবর রাখে, এমন বাঙ্গালী লেখক আর নাই। বিষরে বাঙ্গালী লেখকদিগের এখন সাধারণতঃ বড় শোচনীয় অবস্থা তাহাদিগের অনেকেরই লিখিবার যোগ্য শিক্ষা আছে, লিখিবার শক্তি আছেঃ কেবল যাহ জানিলে তাহাদের লেখ! সার্থক হয় তাহা জানা নাই। তাহারা! অনেকেই দেশ-বৎ্সল, দেশের মঙ্গলার্থ লেখেন, কিন্তু দেশের অবস্থা কিছুই জানেন ন!। কলিকাতার ভিতর স্বশ্রেণীর লোকে কি করে, ইহাই অনেকের স্বদেশ সন্বন্ধীয় জ্ঞানের সীমা কেহ বা অতিরিক্ত দুই চারি খান1 পল্লীগ্রাম, বা ছুই একটা ক্ষুদ্র নগর দেখিয়াছেন, কিন্তু সে বুঝি কেবল পথ খাট, বাগান বাগিচা, হাট বাজার লোকের সঙ্গে মিলেন নাই দেশ সম্বন্ধীয় তাহাদের যে জ্ঞান, তাহা সচরাচর সংবাদপত্র হইতে প্রাপ্ত সংবাদপত্র লেখকেরা আবার সচরাচর (সকলে নহেন) শ্রেনীর লেখক--ইংরেজেরা বটেনই। কাঁজেই তাহাদেৰ কাছেও দেশ

দীনবন্ধু-জীবনী ১৭

সম্বন্ধীয় যে জ্ঞান পাওয়া যাঁ়,তাহ। দার্শনিকদিগের ভাষায়, রঙ্জুতে সপজ্ঞানবৎ ভ্রম জ্ঞান বলিয়। উড়াইয়া দেওয়া যাইতে পাঁরে। এমন বলিতেছি না য়ে, কোন বাঙ্গালী লেখক গ্রাম্য প্রদেশ ভ্রমণ করেন নাই। অনেকে করিয়াছেন, কিন্তু লোঁকের সঙ্গে মিশিয়াছেন কি? না মিশিলে; যাহ। জানিয়াছেন তাহার মূল্য কি?

বাঙ্গালী লেখকদিগের মধ্যে দীনবদ্ধুই বিষয়ে সর্বোচ্চ স্থান পাইতে পাঁরেন। দীনবন্থকে রাঁজকার্যযান্রোধে, মণিপুর হইতে গাঞ্জাম পর্য্যন্ত, দ[ঞ্জিলিউ হইতে সমুদ্র পর্য্যন্ত, পুনঃ পুনঃ ভ্রমণ করিতে হইয়াছিল। কেবল পথ ভ্রমণ ব| নগর দর্শন নহে ডাকঘর দেখিবার জন্য গ্রামে গ্রামে যাইতে হইত। লোকের সঙ্গে মিশিবার তার অপাধারণ শক্তি ছিল। তিনি আহ্লাদ পূর্বক সকল শ্রেণীর লোকের সঙ্গে মিশিতেন। ক্ষেত্রমণির মত গ্রাম্য প্রদেশের ইতর লোকের কন্ঠ! আছুরীর মত গ্রাম্য! বর্ধিয়সী, তোরাপেত্র মত গ্রাম্য প্রজ।, রাজীবের মত গ্রাম্য বৃদ্ধ, নশীরাম বৃতার মত গ্রাম্য বালক, পক্ষান্তরে নিম্টাদের মত সুরে শিক্ষিত মাতাল, অটলের মত নগরবিহারী গ্রাম্য বাবু, কাঞ্চনের মত মন্ুম্য-শোণিতপায়িনী নগরবাসিনী রাক্ষপী, নদের- চাঁদ, হেমচাদের মত “উনর্পাজুরে বরাখুরে”্হাপ পাড়াগেঁয়ে হাপ সুরে বয়াটে ছেলে, ঘটিরামের মত ডিপুটি, নীলকুঠির দেওয়ান, আমীন, তাঁগাদ্‌গীব উড়ে বেহারা, ছুলে বেহার।, পেঁচোর-ম। কাওরাণীর মত লোকের পর্য্যন্ত তিনি নাড়ী নক্ষত্র জানিতেন। তাহারা কি করে, কি বলে, তাহা ঠিক জানিতেন। কলমের মুখে তাহা ঠিক বাহির করিতে পাবিতেন, -আর কোন বাঙ্গালী লেখক তেমন পারে নাই। তীহাঁর আদছুরীর মত অনেক আছুরী আমি দেখি- যাছি-তাহারা ঠিক আছুরী। নদেরচাদ্র হেষচাদ আমি দেখিয়াছি,তাহার। ঠিক নদেরটাদ বা! হেমচাদ। মল্লিকা দেখ! গিয়াছে,_ঠিক অমনি ফুটন্ত মল্লিক। | দ্রীনবন্ধু অনেক সময়েই শিক্ষিত ভাস্কর ব। চিত্রকরের ন্যায় জীবিত আদর্শ সম্মুখে রাঁখিয়। চরিত্রগুলি গঠিতেন। সামাজিক বৃক্ষে সামাজিক বানর সমারূট দেখিলেই অমনি তুলি ধরিয়! তাহার লেজ শুদ্ধ আঁকিয়া! লইতেন। এটুকু গেল তীহার 1২981150. তাহার উপর 10921156 করিবাঁরও বিলক্ষণ ক্ষমতা ছিল। সম্মুখে জীবন্ত আদর্শ রাখিয়! আপনার স্বতির ভাগ্ডার খুলিয়া, তাহার ঘাড়ের উপর অন্তের দোষ গুণ চাঁপাইয়। দ্রিতেন। যেখানে যেটি সাজে, তাহা বসাইতে জানিতেন। গাছের বানরকে এইরূপ সাজাইতে সাজাইতে

১৮ দীনবন্ধু-জীবনী

সে একটা হনুমান বা জান্ুবানে পরিণত হইত | নিমটাদ, ঘটীরাম,ভোলাটাদ প্রভৃতি বন্ত জন্তর এইরূপ উৎপত্তি এই সকল হৃষ্টির বাহুল্য বৈচিত্র বিবেচন। করিলে, তাহার অভিজ্ঞত। বিশ্ময়কর বলিয়৷ বোধ হয়।

কিন্ত কেবল অভিজ্ঞতায় কিছু হয় না। সহানুভূতি ভিন্ন স্ষ্টি নাই। দীনবন্ধুর সামাজিক অভিজ্ঞতাই বিস্ময়কর নহে--তাহার সহান্থভূতিও অতিশয় তীব্র বিশ্বময় এবং বিশেষ প্রশংসার কথা এই যে, সকল শ্রেণীর লোকের সঙ্গেই তাহার তীব্র সহানুভূতি গরিব ছুঃখীর ছুঃখের মর্ম বুঝিতে এমন আর কাহাঁকে দেখি নাই। তাই দীনবদ্ধ অমন একটা তোরাঁপ কি বাইচরণ, একটা আঁছুরী কি রেবতী লিখিতে পারিয়াছিলেন। কিন্তু তাহার এই তীব্র সহানুভূতি কেবল গরিব ছুঃখীর সঙ্গে নহে; ইহা সর্বব্যাপী তিনি নিজে পবিত্র চরিত্র ছিলেন, কিন্তু ছুশ্চরিত্রের ছুঃখ বুঝিতে পাঁরিতেন দীনবন্ধু পবিত্রতার তাঁন ছিল না। এই বিশ্বব্যাপী সহানুভূতির গুণেই হউক বা দৌঁষেই হউক, তিনি সর্ধস্থানে যাইতেন, শুদ্ধাত্মা পাপায্মা। সকল শ্রেণীর লোকের সঙ্গে মিশিতেন। কিন্তু অগ্রিমধ্যস্থ অদাহ্য শিলার ন্যায় পাপাগ্ি কুণ্ডেও আপনার* বিশুদ্ধি রক্ষা করিতেন। নিজে এই প্রকার পবিভ্রচেতা হইয়াও সহান্ৃভূতি শক্তির গুণে তিনি পাপিষ্ঠের ছুঃখ পাপিষ্টের সায় বুঝিতে পারিতেন। তিনি নিমটাদ দত্তের ন্যায় বিশুক্ক-জীবন-স্ুখ বিফলীকত-শিক্ষ। নৈরাগ্ঠপীড়িত মগ্ধপের ছুঃখ বুঝিতে পারিতেন, বিবাহ বিষয়ে ভগ্র-মনোরথ রাজীব মুখোপাধ্যায়ের ভুঃখ বুঝিতে পারিতেন, গোপীনাথের ন্যায় নীলকরের আঁজ্াবর্ভিতা'র ষন্ণ বুঝিতে পারিতেন দ্রীনবন্ধুকে আমি বিশেষ জানিতাম ; তাহার হৃদয়ের সকল তাগই আমার জানা ছিল। আমার এই বিশ্বাস, এরূপ পরদুঃখকাঁতর মনুষ্য আর আমি দেখিয়াছি কিনা সন্দেহ। তাহার গ্রস্থেও সেই পরিচয় আছে

কিন্তু সহানুভূতি কেবল ছুঃখের সঙ্গে নহে সুখ ছুঃখ রাগ দ্বেষ সক- লেরই সঙ্গে তুল্য সহানুভূতি আছুরীর বাউটি পৈছার সুখের সঙ্গে সহান্ভূতি, তোরাপের রাগের সঙ্গে সহান্গভূতিঃ ভোলাচাদ যে শুভ কারণ বশতঃ শ্বুর-বাঁড়ী যাইতে পারে না, সে সুখের সঙ্গেও সহানুভূতি সকল কবিরই সহানুভূতি চাই। তা নহিলে কেহই উচ্চ শ্রেণীর কবি হইতে পারেন ন]। কিন্তু অন্য কবিদিগের সঙ্গে দীনবদ্ধুর সঙ্গে একটু প্রভেদ আছে। সহাঙ্ছ- ভূতি প্রধানতঃ কর্পনাশক্তির ফল। আমি আপনাকে ঠিক অন্যের স্থানে

দীনবন্ধু-জীবনী | ১৯

কল্পনার দ্বার! বদাইতে পারিলেই তাহার সঙ্গে আমার সহান্ৃভূতি জন্মে। যদি তাহাই হয়, তবে এমন হইতে পারে যে, অতি নির্দয় নিষ্ঠুর ব্যক্তিও কল্পনাশক্তির বল থাকিলে কাব্য প্রণয়ন কালে ছুঃখীর সঙ্গে আপনার সূহান্থ ভূতি জন্মাইয় লইয়! কাব্যের উদ্দেগ্ত সাধন করেন। কিন্ত আবার এমন শ্রেীর লোকও আছেন, যে দরা প্রভৃতি কোমল বৃত্তি সকল তাহাদের স্বতাবে এত প্রবল যে, সহানুভূতি তাহাদের স্বতঃসিদ্ধ ; কল্পনার সাহাষ্যের অপেক্ষা করে না মনস্তত্ববিদের| বলিবেন, এখানেও কল্পনাশক্তি লুকাইয়। কাজ করে, তবে সে কার্য এমন অত্যন্ত, বা শীঘ্র সম্পাদিত যে, আমরা বুঝিতে পারি না এখানেও কল্পন! বিরাঁজমান। তাই না হয় হইল। তথা- পিও একট! প্রতেদ হইল। প্রথযোক্ত শ্রেণীর লোকের সহানুভূতি তাহাদের ইচ্ছা বা চেষ্টার অধীন, দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকের সহানুভূতি তাহাদের ইচ্ছাধীন নৃহে, তাহারাই সহানুভূতির অধ্ীন। এক শ্রেণীর লোৌক যখন মনে করেন, তখনই সহান্থভৃতি আসিয়া উপস্থিত হয়, নহিলে দে আসিতে পারে না) সহানুভূতি তাহাদের দ্রাপী। অপর শ্রেণীর লোকের! নিজেই সহানুভূতির দাপ, তাহার! তাকে চান বা না চান, সে আসিয়া ঘাড়ে ,চাপিয়াই আছে, হৃদয় ব্যাপিয়। আসন পাতিয়। বিরাজ করিতেছে প্রথমোক্ত শ্রেণীর লোকের কল্পনীশক্তি বড় প্রবল; দ্বিতীর শ্রেণীর লোকের প্রীতি দয়াদি বৃত্তি সকল প্রবল।

দীনবন্ধু এই দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক ছিলেন। তীহাঁর সহান্ুভূতি তাহার অধীন বাআয়ত্ত নহে; তিনি নিজেই সহাগ্ুভূতির অধীন। তাহার সর্ব- ব্যাপী সহানুভূতি তাহাকে যখন যে পথে লই! যাইত, তখন তাহাই করিতে বাধ্য হইতেন। তাহার গ্রন্থে যে রুচির দোষ দেখিতে পাওয়। যায়; বোধ হয়, এখন তাহা! আমরা বুবিতে পারিব। তিনি নিজে সুশিক্ষিত এবং নির্মল চরিত্র ; তথাপি তাহার গ্রন্থে যে রুচির দোষ দেখিতে পাওয়া যায়, তাহার প্রবলা-__ছুর্দমনীয়া সহান্ুভূতিই তাহার কাঁরণ। যাহার সঙ্গে তাহার সহছানু- ভূতি, যাহীর চরিত্র আঁকিতে বঙিয়াছেনঃ তাহার সমুদার অংশই সাহার কলমের আগায় আসিয়া পড়িত। কিছু বাদ সাদ দিবার তাহার শক্তি ছিল না; কেননা, তিনি সহানুভূতির অধীন। সহানুন্ভূতি তাহার অধীন নহে আমর! বলিয়াছি ষে, তিনি জীবন্ত আদর্শ সম্মুখে বাখিয়! চরিত্র প্রণয়নে নিযুক্ত হইতেন। সেই জীবন্ত আদর্শের সঙ্গে সহান্ভূতি হইত বলিয়াই

২৩ দীনবন্ধু-জীবনী |

তিনি তাহাকে আদর্শ করিতে পারিতেন। কিন্তু তাহার উপর আদর্শের এমনই বল; যে সেই আদর্শের কোন অংশ ত্যাগ করিতে পারিতেন না। তোরাপের স্ষ্টিকালে, তোরাঁপ যে ভাষায় রাগ প্রকাশ করে, তাহা বাদ দ্বিতে পারিতেন না। আছুরীর স্ষ্টিকালে, আছুরী যে ভাষায় রহস্ত করে, তাহা বাদ দিতে পারিতেন না নিম্টাদ্দ গড়িবার সময়ে, নিমটাদ যে ভাষায় মাত- লামি করে; তাহ! ছাঁড়িতে পারিতেন না। অন্য কবি হইলে সহানুভূতির সঙ্গে একটা বন্দোবস্ত করিত,--বলিত,--“তুমি আমাকে তোরাপের বা আছুরীর বা নিষচাদের স্বভাব চরিত্র বুঝাইয়া দাও-_কিন্তু ভাষা! আমার পছন্দ মত হইবে ;-ভাষা তোমার কাছে লইব ন11” কিন্তু দীনবন্ধুর সাধ্য ছিল না সহানুভূতির সঙ্গে কোন প্রকার বন্দোবস্ত করেন। সহানুভূতি তাঁকে বলিত, "আমার হুকুম--সব টুকু লইতে হইবে-মায় ভাষা। দেখিতেছ না যে, তোরাপের ভাষ। ছাড়িলে, তোরাঁপের রাগ আর তোরাপের রাগের মত থাকে না, আছুরীর ভাষা ছাড়িলে, আছবীর তামাঁসা আর আছরীর তামী- সার মত থাকে না, নিমচাদের তাধা ছাড়িলে, নিমটাদের মাতলামি আর নিমচাদের মাতলামির মত থাকে না? সব টুকু দিতে হবে।” দীনবন্ধুর সাধ্য ছিল নাযে বলেন--যে "না তা হবে না-”তাই আমরা একটা আস্ত তোরাপ, আস্ত নিমচাদ, আস্ত আছুরী দেখিতে পাই রুচির মুখ রক্ষ। করিতে গেলে, ছে'ড়া তোরাপ, কাটা আদছুরী, ভাঙ্গা নিমটাদ্দ আমর! পাইতাম

আমি এমন বলিতেছি ন৷ যে, দীনবন্ধু যাহ! করিয়াছেন,বেশ করিয়াছেন গ্রন্থে রুচির দোষ না ঘটে, ইহা সর্বতোভাবে বাগুনীয়, তাহাতে সংশয় কি? আমি যে করটা কথা বলিলাম তাহার উদ্দেপ্ত প্রশংসা বা নিন্দা নহে মানুষটা বুঝানই আমার উদ্দেশ্ত দীনবন্ধুর রুচির দোষ, তাহার ইচ্ছায় ঘটে নাই। তাহার তীব্র সহানুভূতির গুণেই ঘটিয়াছে। গুণেও দোষ জন্মে, ইহা সকলেই জানে কথাটায় আমর! মান্ুষট! বুঝিতে পারিতেছি। গ্রন্থ ভাল হৌক আর মন্দ হৌক, মানুষটা বড় ভালবাসিবার মানুষ তাহার জীবনেও তাই দেখিয়াছি দীনবঙ্ধুকে যত লোক ভাল বাসিরাছে, এমন আমি কখন দেখি নাই বা শুনি নাই। সেই সর্ধ-ব্যাঁপিনী তীব্র। সহাঙ্ভূতিই তাহার কারণ ।'

দ্রীনবন্ধুর এই হুইটী গুণ--( )তাহার সামাজিক অভিজ্ঞতা, (২) তাহার প্রবল এরং স্বাভাবিক সর্ধ-ব্যাপী সহান্ৃভূতি, তাহার কাব্যের গুণ দোষের

দীনবন্ধু-জীবনী। ২১

কারণ-_এই তন্বটি বুঝান এই সমালোচনার প্রধান উদ্দেপ্ত। আমি ইহাঁও বুঝাইতে চাই, যে যেখানে এই ছুইটির মধ্যে একটির অভাব হইয়াছে, সেই খানেই তাহার কবিত্ব নিক্ষল হইয়াছে যাহার! তাহার প্রধান নায়ক নায়িক--(1)91০ এবং 1)6:011)6) তাহাদ্দিগের চরিত্র যে তেষন মনোহর হয় নাই, ইহাই তাহার কাঁরণ। আহুরী বা তোরাপ জীবন্ত চিত্র, কামিনী বা লীলাবতী, বিঙ্জয় বা ললিতমোহন সেরূপ নয়। সহাগ্ুভূতি আছুরী ব। তোরা. পের বেল। তাহাদের স্বভাবসিদ্ধ তাঁষ। পর্যান্ত আনিয়। কবির কলযষের আগায় বসাইয়! দিয়াছিল ; কামিনী ব৷ বিয়ের বেল।, লীলাবতী বা ললিতের বেলা চরিত্র ভাঁষা উভয় বিকৃত কেন? ঘদ্ধি তাহার সহান্থভৃতি স্বাভাবিক এবং সর্বব্যাপী, তবে এখানে সহানুভূতি নিক্ষল কেন? কথাটা বুঝা সহজ এখানে অভিজ্ঞতার অতাব প্রথমে নায়িকাদের কথা ধর। লীলাবতী বা কামিনীর শ্রেণীর নায়িকা সম্বন্ধে তাহার কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। ছিল না--কেন ন।, কোন লীলাবতী বা কামিনী বাঙ্গালা-সমাঁজে ছিল না। হিন্দুর ঘরে ধেড়ে মেয়ে, কোটশিপের পাত্রী হইয়া, ধিনি কোট” করিতেছেন, তাহাকে প্রাণ মন সমর্পণ করিয়। বসিয়। আছে; এমন মেয়ে বাঙ্গালী-সমাঁজে ছিল না--কেবল আজ কাল নাকি ছুই একট। হইতেছে শুনিতেছি ইংরেজের ঘরে তেমন মেয়ে আছে ; ইংরেজ-কন্তার জীবনই তাই। আমাদিগের দেশের প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থেও তেমনি আছে। দীনবন্ধু ইংরেজি সংস্কৃত নাটক নবেল ইত্যাদি পড়িয়া এই ভ্রমে পড়িয়াছিলেন যে, ব।ঙ্গালাকাব্যে বাঙ্গালার সমাঁজস্থিত নায়ক নায়িকাঁকেও সেই ছণচে ঢাল! চাই কাজেই বাহা নাই, যাহার আদর্শ সমাজে নাই, তিনি তাই গড়িতে বসিয়াছিলেন। এখন আমি ইহাঁও বুবিয়াছি যে, তাহার চরিত্র-প্রণয়ন প্রথা এই ছিল যে, জীবন্ত আদর্শ সম্মুখে রাখিয়া চিত্রকরের ন্ায় চিত্র আঁকিতেন। এখানে জীবন্ত আদর্শ নাই কাজেই ইংরেজি সংস্কৃত গ্রন্থের মধ্যগত মুৎ্পুত্তলগুলি দেখিয়া, সে চবিত্র গঠন করিতে হইত জীবন্ত আদর্শ সম্মুখে নাই, কাজেই সে সর্ধব্যাপিনী সহান্ভূতিও সেখানে নাই। কেন না, সর্ধব্যাপিনী সহান্ভূতিও জীবন্ত ভিন্ন িবনহীনকে ব্যাপ্ত করিতে পারে না-জীবনহীনের সঙ্গে সহান্থভূতির কোন সম্বন্ধ নাই। এখানে পাঠক দেখিলেন যে, দীনবন্ধুর সামাজিক অভিজ্ঞতাও নাই--স্বভাবিক সহান্ুভূতিও নাই। এই ছুইটি লইয়াই দীনবন্ধুর কবিত্ব। কাজেই এখানে কবিত্ব নিক্ষল।

২২ দীনবন্ধু-জীবনী

যেখানে দীনবন্ধুর প্রধান নায়িক1 কোট-শিপের পাত্রী নহে- যথা সৈরিন্ধী সেখানেও দীনবন্ধু জীবন্ত আদর্শ পরিত্যাগ করিয়] পুস্তকগত আদর্শ অব- লম্ঘন করিয়াছেন কাজেই সেখানেও নায়িকার চরিত্র স্বাভাবিক হইতে পায় নাই।

দ্রীনবন্ধুর নায়কদিগের সম্বন্ধে গ্রবূপ কথা বলা যাইতে পারে দীনবন্ধু নায়কগুলি সব্ধগুণসম্পনন বাঙ্গালী যুব।-_কাঁজ কর্ম নাই, কাজ কর্মের মধ্যে কাহারও 101)119701)01%১ কাহারও কোটশিপ। এরূপ চরিত্রের জীবস্তআাদর্শ বাঞ্গালাসমাজেই নাই, কাজেই এখানেও অভিজ্ঞতা নাই। কাজেই এখানে দ্ীনবন্ধুর কবিত্ব নিক্ষল

যে প্রণালী অবলম্বন করিয়া দীনবন্ধু জলধর বা জগদথা বা নিমাদের চরিত্র

প্রণীত করিয়াছিলেন, যি এখানে সেই প্রথা অবলম্বন করিতেন, তাহ হইলেও এখানে তাহার কবিত্ব সফল হইত তাহার সে শক্তি যে বিলক্ষণ ছিল, তাহা পুর্ব্বে বলিয়াছি। বোধ হয় তাহার চিত্তের উপর ইংরেজিপাহিত্যের আধিপত্য বেশী হইয়াছিল বলিয়াই স্থলে সে পথে যাইতে ইচ্ছ! করেন নাই পক্ষা- স্তরে ভিন্ন প্রকৃতির কবি, অর্থাৎ ধহাঁদের সহানুভূতি কল্পনার অধীনা', স্বাভা- বিকী নহে, তাহার! এমন স্থলে কল্পনার বলে সেই জীবনহান আদর্শকে জীবন্ত করিয়া, সহান্ুুভূতিকে জোর করিয়া ধরিয়! আনিয়া বসাইয়। একট! নবীন মাধব বা লীলাবতীর চরিত্রকে জীবন্ত করিতে পারিতেন। সেক্ষপিয়র অবলীলা ক্রমে জীবন্ত 0911971. বা 4১016] সৃষ্টি করিয়াছেন, কালিদাস অবলীলাক্রমে উমা ব। শকুস্তলার সৃষ্টি করিয়াছেন। এখানে সহানুভূতি কল্পনার আজ্ঞাকারিণী।

দীনবন্ধুর এই অলৌকিক সমাঁজজ্ঞতা এবং তীব্র সহানুভূতির ফলেই তাহার প্রথম নাটক প্রণয়ন। যে সকল প্রদেশে নীল প্রস্তত হইত, সেই সকল প্রদেশে তিনি অনেক ভ্রমণ করিয়াছিলেন নীলকরের তৎকালিক প্রজা- পীড়ন সবিস্তারে অবগত হইয়াছিলেন। এই প্রজাপীড়ন তিনি যেমন জানিয়া- ছিলেন, এমন আর কেহই ক্গানিতেন না। তাহার স্বাভাবিক সহাগ্তুতির বলে সেই পীড়িত প্রজাদিগের ছঃথ তাহার হৃদয়ে আপনার ভোগ্য ছুঃখের ন্যায় প্রতীয়মান হইল, কাজেই হৃদয়ের উৎস, কবিকে লেখনী মুখে নিঃস্যত করিতে হইল নীলদপণণ বাঙ্গলার [00012 10159 02191. “টম্‌ কাকার কুটীর” আমেরিকার কাফ্রিদিগের দাসত্ব ঘুচাইয়াছে ; নীলদপণ, নীল দাস- দিগের দাসত্ব মোচনের অনেকট! কাজ করিয়াছে নীলদপণণে, গ্রন্ুকারের

দীনবন্ধু-জীবনী। ২৩

অভিজ্ঞতা এবং সহানুভূতি পুর্ণ মাত্রায় যৌগ দিয়াছিল বলিয়া,নীলদ্‌ শরণ তাহার প্রণীত সকল নাটকের অপেক্ষ। শক্তিশালী অন্য নাটকের অন্য গুণ থাকিতে পারে, কিন্তু নীলদর্পণের মত শক্তি আর কিছুতেই নাই। তার আর কোন নাটকই পাঠককে ব৷ দর্শককে তাদ্ৃশ বশীভূত করিতে পারে না। বাঙ্গল। তাধায় এমন অনেক গুলি নাটক নবেল ব৷ অন্যবিধ কাব্য প্রণীত হইয়াছে, যাহার উদ্দেশ্ত সামাজিক অনিষ্টের সংশোধন প্রায়ই সে গুলি কাব্যাংশে নিকুষ্ট, তাহার কারণ কাব্যের মুখ্য উদ্দেশ্ত সৌন্দর্য্যন্যষ্ট তাহা ছাড়িয়া, সমাজ সংস্করণকে মুখ্য উন্দেগ্য করিলে কাজেই কবিত্ব নিক্ষল হয়। কিন্তু নীলদর্পণের মুখ্য উদ্দেশ্য এবন্িধ হইলেও কাব্যাংশে তাহা উৎ্কুষ্ট। তাহার কারণ এই যে, গ্রন্থকারের মোহময়ী সহানুভূতি সকলই মাধুর্যময় করিয়া তুলিয়াছে।

উপসংহারে আমার কেবল ইহাই বক্তব্য যে, দীনবন্ধুর কবিত্বের দোষ গুণের যে উৎপতি স্থল নিদিষ্ট করিলাম;ইহ! তাহার গ্রন্থ হইতেই যে পাইয়াছি এমন নহে বহি পড়িয়। একট| আন্দাজ 11907 খাড়া করিয়াছি, এমন নহে। গ্রন্থকারের হৃদয় আমি বিশেষ জানিতাম, তাঁই কথ! বলিয়াছি, বলিতে পারিয্াছি যাহা গ্রন্থকারের হৃদয়ে-পাইয়াছি, গ্রন্থেও তাহ! পাইিয়াছি বলিয়। কথা বলিলাঁষ। গ্রস্থকাঁরকে ন1| জানিলে, তীহার গ্রন্থ এরূপে বুঝিতে পাঁরিতাম কি না বলিতে পারি না। অন্যে, যে গ্রন্থকারের হৃদয়ের এমন নিকটে স্থান পায় নাই, সে বলিত পারিত কি না, জানি না। কথাটা দীনবন্ধুর গ্রন্থের পাঠকমগ্লীকে বুঝাঁইয়। বলিব, ইহা! আমার বড় সাধ ছিল। দীনবন্ধুর স্নেহ প্রীতি খণের যতটুকু পারি পরিশোধ করিব, এই বাসনা ছিল। তাই, এই সমালোচন। লিখিবার জন্য আমি তাহার পুক্রদিগের নিকট উপযাচক হইয়াছিলাম দীনবন্ধুর গ্রন্থের প্রশংসা বা নিন্দা করা আমার উদ্দেশ্ঠ নহে কেবল, সেই অসাধারণ মনুষ্য কিসে অসাধারণ ছিলেন, তাহাই বুঝান আমার উদ্দেশ্য

পরিশিষ্ট

দীনবন্থুর কাব্যের অনুশীলন

একে কবি দীনবন্ধু মিত্রের গ্রন্থাবলীর সহিত বঙ্গদেশের সেকাঁলের একালের সকল পাঠকই সুপরিচিত, তাহার উপর আবার কবির কৃতী পুক্রগণ যে স্থুলত সংঙ্গরণ প্রচার করিয়াছেন, তাহাতে দরিদ্র বাঙ্গালী পাঠকের গৃহে গৃহে প্র গ্রন্থাবলী দেখিতে পাওয়া যাঁয়। কাজেই পাঠকেরা অতি সহজেই আমার বক্তব্য গুলির দোষ গুণ বিচার করিতে পারিবেন যখন প্র সুলভ সংস্করণ প্রথম প্রকাশিত হয়, তখন (১২৮৩ সালে) কবির বন্ধু একালের বঙ্গপাহিত্যের নবজীবনদাত। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, একটি ক্ষুদ্র জীবনচরিত কাব্য-সমাঁলোচনায় কবি সম্বন্ধে অনেক জ্ঞাতব্য শিক্ষাপ্রদ কথা লিখিরাছেন। বন্ধুর কাব্য-সমালোচনার পাছে পক্ষপাত ঘটে, এই ভয়ে বঙ্কিমচন্দ্র, দীনবন্ধুর কোনও কোনও ভ্রেটির কথ! বিশেষ ভাবেই উল্লেখ করিয়াছিলেন। পক্ষপাঁত অতিক্রম করিবার প্রয়াসে যে কখনও কখনও সধীদিগের বিচার অতিমাত্রায় কঠোর হইয়! দাঁড়ায় সংসারে দৃষ্টান্তের অভাব নাই। আমার মনে হইয়াছে ষে, বদ্ষিমবানুর কয়েকটি মন্তব্য তেষন স্ুবিচারিত নহে। বদ্ষিমবাবুব সমালোচন1 অবলম্বন করিয়াই কবি দীনবন্ধু কাব্যের অনুশীলন করিব

১। নীলদর্পণ।- বঞ্ষিমবাবুর সমালোচনায় অবগত হই যে; ১৮৫৯ সালে

পুরাণ দলের শেষ কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত অস্তমিত”, এবং “নৃতনের প্রথম কবি ম্ধুকদনের অভ্যুদয় ।” কথাও লিখিত আছে যে, যে বৎসর মধুহদনের প্রথম বাঙ্গাল। কাব্য “তিলোত্তমাসম্ভব” প্রকাশিত হইতেছিল, “তার পর বৎসর দীনবন্ধুর প্রথম গ্রন্থ নীলদর্পণ প্রকাশিত হয়।” আমার মনে হয় যে, কবির এই প্রথম কাবা, বঙ্গ সাহিত্যের নবযুগের এই প্রথম প্রচারিত দৃশ্তকাব্য অতি অসাধারণ গ্রন্থ। ইহাঁও মনে করি যে, আজ পর্য)্ত “অঙ্ক” শ্রেণীর দৃ্যকাব্যে এমন একখানি কাব্যও প্রকাশিত হয় নাই, যাহা উহার সহিত প্রতিযৌগিত1 করিতে পারে। নীলদর্পণের মহাক্ম্য সৌন্দর্য্য ব্যাখ্যা করিবার পূর্বে একবার বঙ্কিমবাবুব মন্তব্যটুকু বুঝিয়া লইবার চেষ্টা করি।/

পরিশিষ্ট। ২৫

বঞ্ধিমবাবু নীলদরর্ণ-প্রপঙ্গে দীনবন্ধুর পরছুঃথকাঁতরতা, স্বদেশবতৎসলতা। নির্ভাকতার কথ! কীর্ভন করিয়াছেন। দ্বীনবন্ধু দীনের বন্ধু ছিলেন, এবং প্রলীড়িত। মাতৃভূমির সেবায় তিনি স্তখন অগ্রগণ্য ছিলেন ;--কবির নীলদর্পণ ইহার সাক্ষী; বঞ্ষিম বাবুর মত মহৎ ব্যক্তি ইহার সাক্ষী; বঙ্গের নীলকরদিগের কলক্ষিত ইতিহাস ইহার সাক্ষী। গেল কবির, চবিত্রমাহাক্ম্যের কথা; ইহাতে কাব্যযাহাত্য কিছু বলা হইল ন|। দীনবন্ধু “নীলদর্পণ প্রশ্ন করিয়া! বঙ্গীয় প্রঞ্জাগণকে অপরিশোধনীয় খণে বন্ধ করিয়াছেন”, ইহ! যথার্থ কথ।। কিন্তু বঙ্গীয় সাহিত্যে এই গ্রন্থের গৌরব কতখানি, তাহা বল! হয় নাই। একেবারে যদ্দি কিছু বল। ন| হইত, ক্ষতছিল না|; কিন্তু বঞ্ষিমবাবু যখন এই গ্রন্থের সামাজিক রাঙ্জনৈতিক প্রভাবের কথ। বলিবার পর লিখিলেন যে, দেশে সামাজিক অনিষ্টের সংশোধনের উদ্দেপ্ে লিখিত কোনও কাব্যই ভাল হয় নাই, এবং হইতে পাবে না, তখন একটু স্তম্ভিত হইয়াছিলাম। কথা- গুলি লিখিয়। তাহার পরে যখন নীলদর্পণের প্রশংসায় লিখিলেন যে, “গ্রন্থ- কারের মোহময়ী সহান্থভৃতি সকলই মাধুর্্যময় করিয়া তুলিয়াছে”, তখন বিষয়ের গুণে কাব্যের মনোহারিস্ব বুঝিলাম ইংরেজি একটি বচনের অঙ্গু- বন্তিতায় বলিতে পারি যে, ইহাকে বলে,_-“ক্ষীণ প্রশংসায় দমিয়ে দেওয়। 1”

আদৌ বঞ্ষিমবাবুর এই মন্তব্যটুকুই যথার্থ বলিয়া গ্রহণ করিতে পারি ন| যে; যে সকল কাব্য উদ্দেগ্ত লইয়। রচিত হয়, “সেগুলি কাব্যাংশে নিক; কারণ, কাব্যের মুখ্য উদ্দেগ্ত সৌন্দর্য্য-হৃষ্টি |” যে ইউরোপীয় মন্তব্যের অন্বর্তনে উহা। লিখিত, তাহার মুল গেটের একটি বচনে। উহার অতদুর অর্থ করা সঙ্গত মনে করি না। যাহা সুন্দর নয়, তাহা ষে কেবল তাল সাহিত্য নয়, তাহাই নয় ; সাহিত্যে অসুন্দর ব। কুৎ্সিতের স্থানই নাই। কিন্তু যাহ! “হিত” ব! মঙ্গলের জন্ত মূলতঃ বিকশিত, সে “সাহিত্য” যে “সংস্করণের উদ্দোস্তে ৃষ্ট হইলে সুন্দর হইতে পারে ন।, তাহা স্বীকার করিতে পারি না। যাহ অসুন্দর কুৎসিত, নীচ অকল্যাণকর, তাহ! দুর করিয়! দিয়! উত্ক্ট সাহিত্যে অতি মহান, কল্যাণপ্রদ সুন্দর আদর্শ স্থাপিত হয় ; আমর! সাহিত্যের আদর্শে মুগ্ধ হইয়া নীচতার প্রতি আসক্তি অতিক্রম করি

একট] উদ্দেগ্তহীন খেয়াল লইয়! প্রক্ৃদ্ধির যে কোনও ছবি দর্পণে প্রতি- ফলিত করিয়া লইলেই, কাব্য গড়া যায় না; সৌন্দর্য্যের স্ষ্টি কর! যায় ন|।

২৬ পরিশিষ্ট

ধাহার! ছবি তুলিতে জানেন, ছবি কি তাহা বুঝেন, তাহারা খেয়ালের বশবত্তী হইয়াষে কোনও দৃশ্য তুলিবার জন্যই “ক্যামেরা” পাতেন না। আমর কোনও জিনিস সুন্দর দেখি কেন, সে তত্বের একট। আলোচন। ন। করিলেও, এই সহজ কথাটা সকলেই বুঝিতে পারি, যেগুলি মনুষ্যত্বের কল্যাণময় বিকাশের ফল, তাহা আমাদের চক্ষে পরম স্ুন্দর--অকৃত্রিম শ্রেহ সুন্দর, অচল তক্তি সুন্দর, আত্মবিস্থত প্রণয় সুন্দর, নিংশ্বার্থ হিতৈষণ] সুন্দর | কৃত্রিমতা, চপলতা, নীচতা স্বার্থপরতার যেখানে ডূবিয়া থাকি, সেখানে কবি-স্যষ্ট সৌন্দর্য্য সংস্করণ উদ্ধারের কার্য সাধন করে কবির সেই আদর্শ- স্ষ্টি একট খেয়ালের ফলে নয় ; যাহ! সুন্দর, তাহাই সন্তোগ্য হিতকর বলিয়৷ সে আদর্শ উপস্থাপিত হয়

কাহারও মনে যদি কোনও সমাজ-সংস্কারের প্রবৃত্তি জাগিয়া উঠে, তবে তিনি যাহ। অকল্যাণকর অসুন্দর, তাহার পরিবর্তে যাহ! জীবনপ্রদ অন্দর, তাহাই স্থাপন করিতে চাহেন। সেই উদ্দেশ্টাই যখন সুন্দর, তখন কাব্য-কৌশলের অতাব না থাকিলে সে উদ্দিষ্ঠ সৌন্দর্য্য কেন যে সুন্দর করিয়াই প্রদর্শন করা যাঁইবে না, তাহ! বুঝিতে পারি ন1। ছুঃখপ্রপীড়িত পথন্থান্ত মানবের পরমকল্যাঁণকামনায় ভগবান বুদ্ধদেব যাহ! বলিয়াছিলেন, তাহা উদ্ান গ্রন্থে পাই ; উদ্ানে যে সৌন্দর্য্যের স্ষ্টি, জগতের কোন্‌ সাহিত্যে তাহা আছে ? নিংস্বার্থ মঙ্গলকামনার যত সুন্দর যখন কিছুই নাই, এবং সংস্করণের উদ্দেশ্য যখন তাহাই, তখন সে উদ্দেগ্ততে কাব্য-সৌন্দর্য/-স্থ্টর পরিপন্থী বলিয়া কল্পনা করিতে পারি না। যদি শিল্প-চাতুর্্য না থাকে, তবে খেয়ালেই হউক, উদ্দেশ্ত লইয়াই হউক, কিছুতেই কাব্যের সৌন্দধ্যবিধান সম্ভব হয় না।

নীলকরের। যে ভীষণ অত্যাচারে বাঙ্গালার প্রজাবর্ণকে পিবিয়া মারিতে ছিল, দীনবন্ধু যে তাহার প্রকৃতি ছবি আকিয়াছেন, কথ! বঙ্কিম বাবু স্বীকার কৰেন। তিনি স্বীকার করেন যে, পল্লীচিত্র চাষার জীবনের সহিত দীনবন্ধুর মত অল্প লোকই সুপরিচিত ছিলেন, এবং দীনবন্ধু “ক্ষেত্রমণির মত গ্রাধ্যা। বর্ধয়সীর তোরাপের মত গ্রাম্য প্রজার নাড়ী নক্ষত্র জানিতেন।” তাহ! হইলে, নীলদর্পণে উপস্থাপিত চিত্রগুলি যে প্রকৃতির মুখের উপর দর্পণ ধরিয়। অক্ষিত, তাহাতে সন্দেহ রহিল না। তবে এঁ ছবিগুলি কাব্যের উপধোগী হইয়া চিন্তিত হইয়াছে কি না, তাহা! দ্রষ্টব্য

পরিশিষ্ট ২৪

, নাটকের বঙ্গমঞ্চধানি পল্লীর চিত্রপট দ্রিয়। সাজানো ঘরে বসিয়া পড়িবাঁর সময়েই হউক, আর অভিনয় দেখিবার সময়েই হউক, যদি যনে হয় যে, আমর। যথার্থ পল্লীর মধ্যে আঁসিয়। পড়িয়াছি, তবে বঙ্গমঞ্চখানি সুন্নচিত হইয়াছে, স্বীকার করিতে হইবে আমি পল্লীগ্রামবাসী ; এবং আমাদের সেই ক্ষুদ্ধ পল্লীর নিকটবস্তাী অনেকগুলি গ্রাম বহুদিন নীলকরের দখলে ছিল। আমি যখনই নীলদ পর্ণ পড়ি, বা উহা'র অভিনয় দেখি, তখনই সহর নগর ভুলিয়া, পল্লীবাসী কর্তৃক বেষ্টিত হইয়াছি বলিয়া অন্ুতৰ করি ।: ক্ষেত্রমণি রেবতী যখন জল নিয়ে আসে, রাইচরণ বখন লাগল হাতে করিয়া, যায়, টরিন্ধী যখন চুলের দড়ী বিনায়, সরল! যখন আছুরীর সঙ্গে রহস্তালাঁপ করে, তখন কাহার সাধ্য যে, ভুলিয়াও একবার সহরের কথা তাবিতে পারে ? প্রাকৃতিক ছবির এই সমাবেশই কি যথার্থ শিল্পচাতুর্ধ্য নয় ?

রঙ্গমঞ্চের পরে অভিনেতৃগণের প্রতি দৃ'ষ্ট করিব। বঙ্ষিষবাবু অতি স্পষ্ট তাষায় লিখিয়াছেন যে, “যাহ সুক্ষ, কোমল, মধুর, অকুত্রিমঃ করুণ, প্রশাস্ত _পে সকলে দীনবন্ধুর তেমন অধিকার ছিল না। তাহার সৈরিন্ধী, সরলা প্রন্থতি রসজ্জের নিকট তাত্শ আদরণীয়া নহে।” বাঙ্গালা সাহিত্যে বন্ষিম বাবুর রায়, হাইকোটের শেষ নিষ্পত্তির মত। এই এক কথায় নীলদর্পণের গৌরব একবারে মাটী হইয়া যায়। অন্ধ শ্রেণীর দৃপ্ত- কাব্যে কূণরস স্থায়ী হইলেই কাব্য সার্থক হয়। সমগ্র নাটকখানি পড়িম্! উঠিবার পর যে সেভাব কাবো পাঠকের মনে সম্পূর্ণ স্থায়ী হয়, কথ। সাহস করিয়া বলিতে পাবি বদ্ধবগের সঙ্গে বসিয়া গ্রন্খানি পড়ি- যাছি; অভিনয়ে বহু দর্শকের মনের ভাব প্রত্যক্ষ করিয়াছি; তাহাতে উহ্ার করুণরসাত্মক ভাবের অতিব্যক্তিই অনুভব করিয়াছি আমর! কেহ বঙ্কিম- বাঁবুর মত রসজ্ঞতার দাবী করিতে পারি না, কিন্তু আমাদের মত সাধারণ পাঠকেরাঁও যদি নীলদর্পণ পড়িয়া দলে দলে অশ্রবিসঙ্জন করে, তবে নীলদর্পণে করুণ রসের অতাব স্বীকৃত হইতে পারে না। সমষ্টিভাবে সমগ্র গ্রন্থে যে রস স্থারী, তাঁহ। যে নাটকের প্রবুক্ত পাত্রে ফুটিয়া উঠে নাই, তাহ। কিরূপে স্বীকার করিব ? অত্যাচারীর নিশ্পেষণে নিরীহ গ্রামবাসীরা যে ভাবে মনে প্রাণে মার! যাইতেছে, বন্ষিম বাবু তাহ। অপ্রাকতিক চিত্র বলেন নাই ; তবে কি কারণে বলিব যে, প্র চিত্রগুলি করুণরসরপ্রিত তুলিকায় অঙ্কিত নহে?

২৮ পরিশিষ্ট |

সাবিত্রী সৈরিদ্ধীর নীরব আত্মত্যাগে পতিপুক্রসেবায় যে ছবি পাই, তাহা কোমল, মধুর অকৃত্রিম বলিয়াই বুঝি। গৃহের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সাবিত্রীর ছুর্দশা স্ুকোমলা গৃহবধূ সরলার দুঃখে ্দি অতি কোমল অক্- রিম করুণভাব না থাকে, তবে বঙ্গসাহিত্যে উহা কোথায় আছে, জানিতে চাই। না লইয়! তর্ক চলে না, নাটকের সমগ্র দৃশ্তও তুলিয়া! দেখাই- বার উপায় নাই। পাঠকের। নিজে নিজে পড়িয়। বলুম যে, বন্িম বাবু কঠোর সমালোচন! উপযুক্ত হইয়াছে কি না? চাষার মেনে ক্ষেত্রমণির সতীত্ব-মাহাত্ম যে “স্থুল” কথায় প্রকাশিত, তাহার মধ্যে কি অতি “ন্ুঙ্ষা” সৌন্দর্য্য নাই ? গরীবের মেয়ের অতি কোমল, মধুর, অকৃত্রিম প্রশীস্ত পতি- ভক্তি যেখানে পদদলিত হইতেছে, সেখানকার করুণ রসে সিঞ্চিত হইলে, অত্যাচার-সংহারের জন্য মনে যে তেজ সংক্রামিত হয়, তাহাকে কোন্‌ রসের অভিব্যক্তি বলিব ?

(২) লীলাবতী। -বঙ্কিম বাবু এই স্বুরচিত নাটকখানি সম্বন্ধে লিখিয়।- ছেন, -“লীলাবতী বিশেষ যহ্রের সহিত রচিত, এবং দীনবন্ধুর অন্ঠান্ত নাটকা- পেক্ষা ইহাতে দোষ অল্প এই সময়কে দীনবন্ধুর কবি ব-হুর্্যের মধ্যাহ্ুকাল বল। যাইতে পারে ।” এই প্রশংসার পর আবার অপর স্থানে আছে যে, “লীলাবতী”র চিত্র জীবন্ত নয়, বরং চরিত্র “বিকৃত”। “লীলাবতী ব৷ কামিনীর শ্রেণীর নায়িকার সন্বন্ধে তাহার (দীনবন্ধু) কোন অভিজ্ঞত1 ছিল না--কেন না, কোন লীলাবতী ব1 কামিনী বাঙ্গাল! সমাজে ছিল না। হিন্দুর ঘরে ধেড়ে মেয়ে, কোর্টসিপের পাত্রী হইয়া, যিনি কোট করিতেছেন, তাহাকে প্রাণ মন সমর্পণ করিয়া বসিয়া আছে, এমন মেয়ে বাঙ্গালী সমাজে ছিল না__- কেবল আজ কাল নাকি ছুই একটা হইতেছে শুনিতেছি। .....দীনবন্ধু ইংরেজি সংস্কত নাটক পড়িয়া এই ভ্রমে পড়িয়াছিলেন যে, বাঙ্গাল কাব্যের নায়ক নায়িকাকেও সেই ছণাচে ঢাল! চাই। দীনবন্ধু প্রাচীন সংস্কৃত ছণচে কিংব! হালের ইংরাজী ছাচে লীলাবতী ঢালিয়াছিলেন কি না, বিচার করিয়া দেখিব।

যাহ। “মাজকাল না কি একটা হইতেছে” বলিয়৷ বঞ্ষিম বাবু কেবল দুর হইতে শুনিয়াছিলেন, তাহা যে ষ্টিক বঙ্িম বাবুর নিকট এঁ অস্বাভাবিক জনশ্রুতি পঁছছিবার দিন কি তৎপূর্ব দিন ঘটিয়াছিল, তাহা নয়। দেশের অনেক লোক যে স্ত্রীশিক্ষা একটু বেশী বয্মসে মেয়ের বিবাহ দিবার জন্য

পরিশিষ্ট। ২৯

অনেক পুর্ব হইতেই উদ্যোগ সংঙ্কল্প করিয়া আসিতেছিলেন, দীনবন্ধুর পূর্ববর্তী “পুরাণ দলের শেষ কবি” ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তও তাহা জানিতেন। গুপ্ত কবি তাহার অবজ্ঞার জিনিসটা একট দূরে শোনা কথ। বলিয়া! উড়াইয়া দেন নাই ; তিনি তাহার বিরুদ্ধে কলম ধরিয়া! পরিহাস কয়িয়া লিখিয়াছিলেন,_

“আগে মেয়েগুলো ছিল ভাল ব্রত ধন্দ করত সবে;

একা বেখুন এসে শেষ করেছে, আর কি তাদের তেমন্‌ পাবে ?

যত ছু'ড়িগুলে৷ তুড়ি মেরে কেতাব হাতে নিচ্চে যবে,

তখন্‌ এ, বি, শিখে বিবি সেজে বিলাতী বোল্‌ কবেই কবে ।" দীনবন্ধু বহুদরশশী ছিলেন ; সকল শ্রেণীর লোকের সহিতই তিনি মিশিতেন ; কথ বন্িম বাবু বার বার লিখিয়াছেন। যে সকল পরিবারে “ধেড়ে মেয়ে” পোধা স্ত্রীশিক্ষা চলিতেছিল, সে সকল পরিবারের অনেকগুলির সহিতই দ্বীনবন্ধুর মিত্রত। ছিল। ইহার প্রধাণ যথেষ্ট আছে। তবে সুরধুনী কাব্যখানির সাক্ষ্যেই সে কথা বলিতে পারি। যাহা প্রচলিত হইতে আরন্ত হইয়াছিল, তাহা অতি অল্পসংখ্যক পরিবারে বদ্ধ ছিল বলিয়াই যে নাটকের প্রতিপা্চ নহে, তাহা কেহ বলিতে পারেন না। এই যে নূতন শিক্ষার ক্রোতে নূতন ভাব ধীরে ধীরে সমাজে প্রবেশ করিতেছিল, তাহার শুভ অশুত ফলের কথা সকলেই ভাবিতেন। সেই নূৃতনত্রটুকু প্রাচীন সমাজের মধ্যে খাঁপ. খাইতেছিল কি না, শিক্ষার ফলে প্রাচীনতার দিকে নূতনেরা কি প্রকার দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতেছিলেন, কথ। নাটকের বিশেষ আখ্যানবস্ত মনে করি প্রব। যদি অবজ্ঞার জিনিসও হয়, তবুও উহার একট! প্রভাব সমাঙ্গেত্খ উপর যে ভাবে পড়িতেছিল, তাহাঁও প্রদর্শিত হইতে পারে।

লীঙ্গাবতীকে হিন্দুর ঘরে ঠিক হিন্দুর মেয়ের মতই দেখিতে পাই তবে সে লেখা পড়া শিখিয়াছে, এবং শৈশব অতীত হইবার পুর্বে বিবাহিতা হয় নাই ঠিক এই অবস্থায় হিন্কুর ঘরে কৌলীন্ত প্রথার মাঝখানে, প্রাকৃতিক তাঁবে যাহা ঘটিতে পারে, দীনবন্ধুর গ্রন্থে তাহাই বর্ণিত দেখি। দীনবন্ধু প্রথাকে অবজ্ঞার জিনিস মনে করেন নাই বলিয়া, “ধেড়ে মেয়ে” গোছের কথাগুলি, গুলির আড্ডার লোকের মুখেই দিয়াছেন বিরোধ-বাদেও দীনবন্ধু শিষ্টাচারের পরিহাস করিতেন না; ভদ্রলোকের মেয়ের কথা সসম্মানেই উল্লেখ করিতেন লপিতসোহন লীলাবতীচে বিলাঁতী ধরণের কোর্টসিপচলিত কথা

৬০ পরিশিষ্ট

বঞ্ষিম বাবু কোথায় পাইলেন? তিনি দীনবন্ধুর গ্রন্থ যথেষ্ট পড়িয়াছিলেন, কিন্ত সমালোচন। লিখিবার সময়ে হয় স্থৃতির উপরই নির্ভর করিয়াছিলেন হিন্দুর গৃহের কুমারী কন্তার সহিত স্বাভাবিক ভাবে যাহাদের সঙ্গে দেখা শুন! হয়, তাহাদের সঙ্গেই হইয়াছে এরূপ অবস্থায় বয়ংপ্রাপ্তা শিক্ষিতা কুমারী, পরিবারের কোন ব্ধু যুবকের প্রতি যদি আকৃষ্টা হয়ঃ তবে তাহাতেও কিছু অন্বাতাবিকত। নাই। বিবাহের উদ্যোগে যে কোটসিপ. হয় নাই, তাহ স্পষ্ট করিয়াই বুঝান আছে; ললিতমোহন লীলাবতী বিবাহের পুর্বব পর্য্যন্ত জানিতেন না যে, তাহাদের এক জনের অন্ুরাগের কথ! অপরে জানিতেন। আর যে দোষ থাকে থাকুক, বর্ণনার অস্বাভাবিকতা দীনবন্ধুর রচনায় কুত্রীপি নাই

দ্রীনবন্ধুর সময়ের অনুষ্ঠিত প্রথার প্রতি যে কবির অনুরাগ ছিল, তাহা বুঝিতে পারি। সেই জন্যই শিক্ষিত বয়ঃপ্রাপ্তা কুমারী তাহার গ্রন্থের নায়িকা, এবং সেই জন্যই সুশিক্ষিত। ধর্মপ্রাণ শারদাসুন্দরী তাহার নাটকে আদর্শমহিল]। মহিমময়ী শারদাসুন্দরী তাহার কুশিক্ষিত শিথিলচরিত্র স্বামীর চরণে প্রেমতক্তি ঢালিয় তাহাকে সুপথগামী করিয়াছিলেন। আদর্শ ইংরাজি ছ'চে ঢালা নয় শারদাসুন্দরী স্বামীর “মুক্তিমগ্পের” সংবাদ জানিতেন ; ভ্রমবের মত ক্ষীরী দাসীর মুখে শোনেন নাই; কুসংসর্গের কথা ঝুস্পঈই জানিতেন ; রোহিণীর মিথ্যা ছলে জানির! লইতে হয় নাই। তবুও তিনি অন্ুরাগিবী হইয়। স্বামীকে টানিয়। ধরিয়া ভাল করিয়। তুলিয়াছিলেন।

ইংরেজি ছণাচ, ইংরেজি প্রেম ইংরেজি কোটসিপ বরং নব-বঙ্গ-সাহিত্যের কর্ণধারের রচনায় বেশি লক্ষ্য করিতে পারি। যখন অতুলপ্রতিভাশালী বঙ্কিমচন্দ্র দূর্গেশ-নন্দিনী প্রকাশ করিয়। বঙ্গে নৃতনবিধ সরস কথাগ্রন্থের রচনা আর্ত করিলেন; তখন প্রেমের পুর্ববরাগ ফুটাইবার জন্ত বাজপুতের পরিবার অবলম্বন করিয়াছিলেন। জোর করিয়৷ অতি সম্ত্রান্ত মুসলমান নবাবের ঘরের মেয়েকে বন্দীর পরিচর্যযার নিযুক্ত করিয়া, খাটী ইউরোপীয় ধরণের প্রেমের প্রগল্ততায় ওসঙ্গানকে দশ কথ! শুনাইয়! দিয়াছিলেন। বঙ্ষিমবাবু যদি নৃতনের প্রতি অবজ্ঞা দেখাইয়! দুরে ন৷ থাকিতেন, তবে আমাদের সামাজিক অবস্থা হইতেই অনেক উপাদান পাইতেন; ইতিহাসের পৃষ্ঠায় রাজপুতের অন্দরমহলের সংবাদ লইতে হইত না।

কালের গৃহিণীরা কর্তার বাত্রিকালের ভাতে, পাখার বাতাসে মাছি

পরিশিষ্ট ৩১

তাড়াইয়! দেয় না বলিয়া, দেবী চৌধুরাণীতে তিনি একালের মাথার উপর যতর্দিন বাজ পড়িবার আদেশ দেন নাই, ততদ্দিন তিনি ইউরোপের আদর্শকেই ঘবিয়! মাঁজিয়। স্বদেণী করিতেছিলেন। যে যুগে তাহার “সাম্য? রচিত, সেই যুগেই বিষবৃক্ষ কৃষ্তকাস্তের উইল রচিত হইয়াছিল বঙ্ষিম- বাবুর সকল কথাগ্রস্থই সুমিষ্ট, সুপাঠ্য শিক্ষাপ্রদ হইলেও, বিষরক্ষ কৃষ্ণকান্তের উইল তাহার শ্রেষ্ঠ রচনা বলিয়া আমার ধারণ! বিষরৃক্ষে একটি আদর্শ রমণীচরিত্র গড়িতে কাব্যশিল্ীকে কত চেষ্টাই না করিতে হইয়াছে বড়মানুষ জমীদারের ঘরে একটা অতিরিক্ত উপসর্গ জুটিন্বে গৃহিণীটি বাড়ী ছাড়িয়া পলাইয়! যান না; হিন্দু নারীর সামাজিক শিক্ষান় শ্রেণীর অস্ুয. অভিমান জন্মে না তাহা না জন্মাইলেও ঠিক কালের রুচির মত পারিবারিক ট্রাজজিডি ঘটাইতে পার! যায় না। এই জন্য শিল্পদক্ষ বঙ্কিম প্রথমতঃ নগেন্দ্রনাথকে সুশিক্ষিত জমীদার করিয়াছেন ) এবং সে পরিবারে কিংব। নিকটবত্তাঁ সমাজে তাহার অভিভাবকের শ্রেণীর কোনও লোক পর্য্যস্ত রাখেন নাই। বাড়ীতে যে সকল স্ত্রীলোক থাকিত, তাহারা কেহ ক্র্য্যমুখীর কাছে যাইতে সাহস করিত ন।। অর্থাৎ, নগেন্দ্রনাথ কুর্ধ্যমুখী সম্পূর্ণরূপে দশ জনের সংস্রব মতের প্রশাব হইতে দুরে থাকিতেন। সেই স্থানে পত্ীবৎসল নগেন্দ্রনাথ হূর্ধ্যমুখীকে গাড়ী ইাকাইতে দিতেন, সর্ধন্বের উপর আধিপত্য করিতে দিতেন তাই হ্র্ধ্যমুখী সহিতেই পারিলেন ন৷ যে, যে গৃহে তিনিও তাহান স্বামী তুস্্যরূপে প্রভু, যে শয্যা “তাহার,” মে গৃহ সে শষ্য অন্ঠা কি করিয়া কলুবিত করিবে বদ্চিমচন্দ্র কৌশলপুর্বক ক্্ধ্যমুখীকে কালের মত করিয়। নূতন আদর্শে গড়ির। লইয়াছিলেন। স্বামী যখন অগ্ঠার প্রতি অস্থরাগী, তখন সে যেন একেবারে সংপার হইতে মুছিয়।! গিয়াছে। ভাবের এই তীত্রত। আর দশটি কমলমণির সঙ্গে বাম করিলে জন্মিত না। বঙ্কিমচন্দ্র অসাধারণ কাব্যকৌশলে নুতন ছণাচের জিনিসটি স্বাতাবিক সুন্দর করিয়। গড়িতেন। সংসারে তাহার কেহ ছিল না, এমনি করিয়া কুন্দনন্দিনীটি সংগ্রহ করিয়াছিলেন বলিয়াই সে জমীদারের ঘরে আশ্রিত ছিল। নুযোগের স্ষ্টি করিয়! দিয়াছিলেন বলিয়া, নগেন্্রনাথ বাঁপীতটে খাটী ইউরোপীয় ধরণে কুন্দকে “কোর্ট করিতে পারিয়াছিলেন। বঙ্ষিমবাবু সুকৌশলে বিলাতী ছণাচ ব্যবহার করিতেন। কিন্তু দীনবন্ধু সর্বদাই স্বদেশের ছণচ বজায় রাখিয়া নৃতন উন্নত ভাব ফুটাইতেন। নারী জাতি

৬২ পরিশিষ্ট

কেবলমাত্র উপভোগের পদার্থ নয়, তাহাদের একট। মহাজ্ম্য মর্যাদা আছে, তাহাদের শিক্ষার প্রভাবে গৃহ উজ্জ্বল হয়, সমাজ পবিত্র হয়; আদর্শ দীনবন্ধুর পূর্বে কঙ্গসাহিত্যে কেহ স্থাপন করিয়াছেন কি? তাহার হান্তরস নাটকের চরিত্রধৈচিত্র্যের মধ্যে কুত্রাপি এমন কিছু নাই, যাহ! অসাধু, অকল্যাণকর, কিংৰা নারীজাতির মাহাজ্ম্ের বিরোধী। সকল কথা বিশেষ করিয়! পরে বলিবাবর সুবিধা পাইব।

(৩) স্ুরধূনী কাব্য ।_-বঙ্ষিমবাবু লিখিয়াছেন যে, সুরধুনী কাব্য যাহাতে প্রচারিত না হয় “আমি এমত অনুরোধ করিয়াছিলাম,_-আমার বিবেচনায় ইহা দীনবন্ধুর লেখনীর যোগ্য হয় নাই ।” যেবিষয়ের বর্ণনায় প্র কাব্য লিখিত, তাহাতে তঁহ। খুব উচ্চদ্রের খগণ্কাব্য হইতেই পারে না। দীনবন্ধু নিজে যে কাব্যখানি কাব্যকৌশলের একট। বিশেষ সৃষ্ট বলিয়! প্রকাশ করিয়াছিলেন, তাহা মনে হয় না। তবে কেন যেতিনি বক্ষিমবাবুর মত বন্ধুর অনুরোধ রক্ষ! করেন নাই, কাব্যথানি পড়িলেই তাহার কারণ বুঝিতে পারি। সে কথ! পরে বলিতেছি। কাব্যথানি যখন প্রথম প্রকাশিত হয়, তখন রেবরেও লালবিহারী দে উহার নিন্দা করিয়া সমালোচনা করি- য়াছিলেন। সে সমালোচনার কবির ছন্দ ভাষার দোষের কথ। উল্লিখিত হইয়াছিল, কিন্তু তাহার দৃষ্টান্ত উদ্ধত হয় নাই। এনিন্দার কোনও মূল্য নাই ; কারণ, দ্রীনবন্ধুর ভাষ। সর্বত্রই সুমাঞজ্জিত, এবং ছন্দ-অতি নির্দোষ শ্রীযুত রমেশচন্দ্র দত্ত যথাথই বলিয়াছেন যে, কোথাও ছন্দঃ-পতন হওয়া দুরে থাকুক, বরং সুরধুনীর মত উহার ধার! বহিয়। গিয়াছে। খুষ্টায়ান রেবরেগু হয় “সুরধুনী” নামের কাব্য দেখিয়াই বিরক্ত হইয়াছিলেন। উহাদের মধ্যে সি'ছুরে মেঘের ভয় অত্যন্ত অধিক। এই গ্রন্থে অনেক কৃতী ব্যক্তির প্রশংসায় তাহার ঈর্ধযাও হইয়াছিল, ইহাঁও অন্যান কর! যায়

গঙ্গাকে তগীরথ আনিয়াছিলেন কুলপাবনের জন্য ; কিন্ত দীনবন্ধু সেই বঙ্গসৌভাগ্যবিধায়িনী তটিনীর কুলে কূলে বহু শতাব্দীর নিজীঁবতার পর নবজীবন-সঞ্চার দেখিয়!, সেই নবজীবন মাহাজ্জ্যের বর্ণনা করিবার জন্য গঙ্গাক্রোতকে আক্মান করিয়াছিলেন। দীনবন্ধু স্বদেশবৎ্সল ছিলেন; স্বদেশের উন্নতির জন্য তিনি সব্ধদা উৎসুক ছিলেন। তাই তিনি যখন দেখিতেছিলেন যে, নূতন সভ্যতার দীপ্তিতে দেশ বলসিঘ্বা! না গিয়া, আবার মাথা তুলিতেছে, তখন গঙ্গাবাহিনী ধরিয়৷ নব দেশের নূতন বর্ণন। লিখি-

পরিশিষ্ট। ৩৩

যাছিলেন। বাসুদেব সার্বভৌম হইতে আরস্ত কবিয়! নবীন সমাজ সংস্কারক পর্যান্ত সকলের কথাই সাগ্রহে পোত্সাহে লিখির়াছিলেন ! যে সকল মহাত্স। নব-বঙ্গে নবজীবন দিয়াছেন, কবি প্রা ভরিয়া তাহাদের মহিমা গাহিয়াছেন ;--রামগোপাল, রপিককৃষ্ণ, বিদ্যাপাগর, বামতন্ত, কুষ্ণমোহন,ঃ রাজেন্দ্রলাল, মধুহুদন, নবীনরুষ্জ, দেবেন্দ্রনাথ, রাজনাব্রায়ণ, কেশবচন্দ্রঃ ইহার! সক্কলেই সগৌরবে উল্লিখিত হইরাছেন। প্রাণ খুলিপ্না সমকালের লোঁক- দ্রিগকে মহাআ। বলিয়া কীর্তন কর সকলের পক্ষে সহজ নম্ব। বাহার! হত- ভাগ্য বঙ্গের উন্নতিকল্পে একখানি তাল নূতন ব্যাক্ুরণ লিখিয়াছিলেন, স্বদেশব২সল তাহাদের নাম করিতেও ভুলেন নাই। যিনি তাহার কাব্যের নিন্দ। করিয়াছিলেন, দ্বিতীয় ভাগে তাহার প্রশংসা .কবিতেও বিস্বৃত হয়্েন, নাই; প্রথম ভাগে কষ্ণমোহনেরও প্রশংসা ছিল। দীনবন্ধুর মত গুণগ্রাহী উদ্দারচরিত ব্যক্তি সংসারে ছুলভি। সুরধুনী কাব্যখানি কবির উৎকুষ্ট কাব্য- শিল্পের সাক্ষী না হউক, উহ! তাহার পবিত্রতা, স্বদেশবৎ্সলতা উদারতার অক্ষয় সাক্ষী

ভোতারাম ভাটের প্রতি প্রযুক্ত পরিহাসে যখন কিছুমাত্র তীব্রতা নাই, এবং কবি যখন লালবিহারীর গুণকীর্তনেও অকুষ্ঠিত, তখন, অন্যায় সমা- লোচনার প্রতি একট কটাক্ষকে দীনবন্ধুর চরিতের "ক্ষুদ্র কলঙ্ক” রূপেও বর্ণন। করিতে পারা যায় না

শ্রীবিজয়চন্দ্র মজুমদার

২1 বঙ্কিম-দীনবন্ধু।

শশী টি

“ক সু মাংতবদধীন জীবিতং বিনিকীর্ধ্য ক্ষণভিন্ন সৌন্বদঃ। নলিনীং ক্ষত সেতু বন্ধনে জলসংঘাত ইবাসি বিদ্রতঃ

রঃ ঈঁ সঁ %

ক্বর্ণে মর্তে সত্বন্ধ আছে সেই সম্বন্ধ রাখিবার নিমিত্ত এই গ্রন্থের এক্প

ভতসর্গ হইল ।”

আনন্দমঠ |

০০

“ছুটি তারা, ছুই দিকে, দীপ্তির আর, তাসি বঙ্গ-কবিতার নবীন গগনে, অমর জ্যোতির সুখে হেরি পরস্পর, অমর জ্যোতির প্রেমে বাধিল দুজনে

এক জননীর পাশে বসি ছুই জনে,

হুই জনে ধরি মার দুইটি চরণ,

সাজাল আনিয়া, যেথা কবিতা-কাননে, যে ফুল ছড়াত স্থখে অমর কিরণ

এক জন, সদ! হাসি চিত্ত-জোছনায়, ফুটায়ে অমর-প্রতা “মালতী” “মল্লিকা”, হেসে হেসে দিয়েছিল অমরসখায় অময়ের গলভূযা; অমর-মালিকা

আর একজন, পশি “যমুনাপুলিনে১ ছুই দিন পরে, “ফিরি একা বনে বনে», বহিবে যে শোক-তার, “বিকচ নলিনেঃ ফুটায়ে তরুণ তান তাহারি ল্মরণে।

বৃঙ্ষিমচন্ত্ '

নব

1

নন

মর রে

*৮/1,1

স্ট

পরিশিষ্ট। ৩৫

প্রেষ-গীতিময় প্রাণ ঢালিল সখায় বিরহের মধুময় অমরগাথায়

আজি কতদিন, হায়) মিশেছে অযায় সে “মালতী মল্লিকা'র জীবন জোছন। ; আপ্জি কতদিন হ'ল, অমৃত মুধায়, ভুলেছেন জীবনের যাতনা, তাড়ন।।

হাহাকার করি বঙ্গ করিল রোদন, দেবতার তবে কার না ঝরে নয়ন? জীবন-সখার তার প্রাণের ক্রন্দন, শুনিল কেবল সেই অন্তর্ধা্মী জন; সেই ব্যথা, সে হৃদয়ে গাঢ় রেখাময় ; সেই প্রেম সে সখার, ভূলিবার নয়।

তাই, কত বর্ষ পরে, দাড়ায়ে বখন ' আনন্দমঠের হ্ছারে, গীতিময়-প্রাণ, লয়ে ভক্তি-গীতিময় কুস্থুম চন্দন; করি সপ্তকোটী প্রাণে বেগে বহমান একপ্রাণ জীবনের তড়িৎ প্রবল? গেয়েছিল মহাগীত, আনন্দে অধীব, “সুজলা, "সুফলা” সেই অনন্ত-স্তামলা, স্বর্গাদপি গরীয়সী মহাজননীর ; তখন অপর দিকে ডাকিল হৃদয় ক্ষণতিন্ন সৌহৃদ? সে জীবনসখায়। অমরপ্রেমের এই মহ! দিখিজয়, বর্ণ মর্ত্যে সন্বন্ধণ কভু না ফুরায়। ১৩০ উন ] শ্রীবস্থিমেচন্দ্র মিত্র |

০০১১৩

৬১. দেবত্বপ্।

“পিতা স্বর্গ; পিতা ধন্মঃ পিতাহি পরষস্তপঃ। পিতরি প্রীতিমাপন্নে শ্রীয়ন্তে সর্ববদেবতাঃ ॥"?

শুর একাদশী নিশি চারু শোভাময়ী জল স্থল পুলকিয়া দাঁড়াইয়া ওই ; অতুল অর্দেন্দু ফৌোট। বিরাজিত ভালে, স্থনীল কুন্তল শোভে তারকার জালে

অনন্ত অন্বরময়ী যামিনী হাসিছে, নিয়ে শুভ্র স্ুবসন। তটিনী ছুটিছে ; তরল-তরঙ্গ। গঙ্গ৷ প্রসন্নসলিল। দুকুল প্রসন্ন করি করিতেছে লীল!।

তীবেতে নির্ধান চিত। ভন্ম-আচ্ছাদিত, ভন্ম-তলে দেব-অস্থি-গুলি লুক্কায়িত ; সেই দেব শরীরের পুণ্য অবশেষ পুণ্যময় করিতেছে শ্মশান-প্রদেশ |

সেই ভন্ম বাখিবারে যত্নে চিরদিন, বসেছি শ্মশানে যেন আমি পিতৃহীন ; নয়নে বহিছে মোর সপ্ত-সিন্ধু নীর, হৃদয় প্রলয়ে যেন হয়েছে অস্থির

দেখিলাম জাহ্বীর পবিত্র সলিল উলিয়। উঠিতেছে সেথা তিল তিল; ভাসাইয়। নেয় বুঝি রক্ষিত সে ধন, দগ্ধ হৃদয়ের সেই শীতল চন্দন

তখন ধরায় লুটি কাঁদিলাম কত , অনাথ বালক হায় পাগলের মত; | বলিলাম করজোড়ে “পতিত পাবনি-- শীতল সলিলে তব আছে কি অশনি

পরিশিষ্ট খিক

“ভাগা'ওম। এই ভন্ম সশিলে তোমায় নিঃস্থের সর্বস্ব যে প্রা অভাগার ; একা আমার নক" সমগ্র বঙ্গের কাঙ্গাল প্রজার যে আলো নয়নের ।”

«এই ভন্মে ঢাকা আছে মধুময় প্রাণ, মোহন ধ্বনিতে যার বছিত উঞ্জান সর্ব ছুঃখ-তরঙিণী; সুধার আধার- যথা মধুময় ছবি পূর্ণ চন্দ্রমার ।”

“স্থধাকর পাশে হেথা তেজ আদিত্যের, অমিত অপ্ত.ত বল অমিক্ব-প্রাণের ;

এই ভম্ম ক্রাপ-মন্ত্র চির পীড়িতের, অসীম অনন্ত হেথা বন্ধুত্ব দীনের ।”

“ওই দেখ নীলকর বিষধর শিরে আর্তবন্ধু নরবর দাড়াইয়া ধীরে, দলিত করিছে সেই ভীবণ ভুজঙ্গে, নিস্তারিতে দংশ হতে স্বর্ণ বজে 1”

“এই দেবতার ভল্ম দিব না তোমায় যতনে রাখিয়। দিব তাপিত হিয়াক় ? শূন্ঠ করি তাগ্যহীন গৃহ বাংলার, ভাসা+ওন। এই ভম্ম সলিলে তোমার ।”

অকন্মাৎ সে সলিল হতে বাহিরিয়া রজত-রূপিণী মৃত্তি দাড়াল যোহিয়া ; সর্বাঙ্গে করুণা-ধার! বছিতেছে যার; মমত]। বদন খানি, ভাঘা স্নেহ-সার। বলিলেন “কেন বৎস ব্বথা রোদন ) এই তম্ম ভাঁসিবে না সলিলে কখন; দেব-বহ্িছ এর মাঝে আছে বা সঞ্চিত নিজাবে করিবে তাহা চির উদ্দীপিত।”

সপ্ক। - -

রঃ

বাসপুর্ণিমা ১৩১৩, দবীনধাষ) কলিকাতা

পরিশিষ্ট 1 :

“আমার পুণ্য নীলে পুণ্য ভম্ঘ এই রহিবে অনস্থ কাল হয়ে মৃত্যু-জয়ী ; কল্লোলিনী সুরধুনী যাবৎ বহ্ছিবে, দীনবদ্ধ নাষ বঙ্গে নিত্য নিনাদিবে 1৮.

“দিব্য কর বিনির্মিত উজ্জল বর্পণে দেখিবে বঙ্গের লোক জলস্ত বরণে, আর্তের উদ্ধার হেতু শরীর পাতন, নিঃস্বার্থ পরের হিতে মুক্ত প্রাণপণ

“সাধবীর নয়ন-নীরে ক্ষুদ্র তণ প্রা ছুর্ত্তির এরাবত দুরে ভেসে যায় নির্দোধীর রক্ত-আোতে মুক্তি-বীজ ফুটে, প্রাণময় গোমুখীর শত ধারা ছুটে “বীরধর্্ম চিরদিন ছুষ্টের দমন,

ভুজবলে নৃশংসের সমূলে নিধন ;

এই কর্তব্যের পথ অঞ্ষিত হেথার দিবাকর দীপ্তি যথা সুপ্ত পুর্বাশায় 1”

“আমার নীরধারা যত দুর বয় দর্পণ আলোকিবে সমগ্র আলয়,

* প্রতিগৃহ উজলিবে নবীন মাধবে, মহাপ্রাণ তোরাপের বীর অবয়বে সহস। ভাঙ্গিল নিদ্রা প্রভাত আলোকে, বিহঙ্গ উঠিল গাহি প্রভাতী পুলকে ; বুঝিলাম টদববাণী কভু মিথ্যা নয়, বঙ্গ মাঝে জাশিতেছে বীরের হৃদয়-।

শ্রীবহ্কিমচন্দ্র মিন্র

নিয়লিখিত পুস্তর্গুলি কুলিকাতা ৩০1৩ মদন মিত্রের গলি

- পদীনুধামে” গুরুদাস বাবুর দোকান পাওয়া যায়।

নীলদর্পণ

চন €।

নবীন তপস্থিনী

বিয়েপাগ লা বুড়ো! , স্ধবার একাদশী

লীলাধতী

জামাই-বাত্িক কট? 5

কমকোকামিনী

সুরধুনী কার্য বানা কবিতা:

পদ্ঘসংগ্রহ ( জাঙাই-হষ্ি সহিত )

*কঙ

গা

পিক জড়

মালয় জীয়ন্ত মানুষ পোড়ামহেশ্বর দীনবন্ধু জীবনী” বক্ষিমচন্ত্র প্রণীত )

কক

দীনবন্ধু ্রস্থাবলী (প্রতিমূর্তি হস্তলিপি মহিত )

কাত 0 হছ1910015 পয 8.9 81২0,

রা. 11 109117099৪১ আলী

98170861010 9889 ) ..

(18 011 850165 65০ 11601090806 30৮০97068 75 14511 00000750415 ঘি, ১০০,

দীনধণম, কলিকাতা

তাস ডারলাটরচেরাজ

শ্ীজ্যোতিষচন্দ্র মিত্র

৯৯ ৮০

৯৯

৯5

৪৯

909. 20106.